গত কয়েক বছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশ দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় করতে পারে না। সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দরবৃদ্ধি তাদের ওপর চাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন একসময় ১০ টাকা কেজি দরে দুস্থদের মধ্যে চাল বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ এক সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত। এ কর্মসূচি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরো কমে আসবে।
খাদ্যবান্ধব নামের এ কর্মসূচিতে বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারীরা অগ্রাধিকার পাবেন। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় দুস্থ ব্যক্তিদের বাছাই করা হবে। এ কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম বা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব যেন না থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, ব্যক্তিগত ভোগবিলাস নয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে সাধারণ মানুষের ভাগ্য তিনি বদলাতে চান। প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষ্য যে শতভাগ নিখাদ, তার প্রমাণ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ। তবে আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি, সরকারের অনেক শুভ উদ্যোগ পুরোপুরি সফল হয় না। এই ব্যর্থতার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহলের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মীও দায়ী। অনেক সময় রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতির কারণে কাঙ্ক্ষিত জনগোষ্ঠীর কাছে সেবা পৌঁছে না। অভিযোগ রয়েছে, নব্য অনেক আওয়ামী লীগারের এ-জাতীয় কর্মকাণ্ড ত্যাগী নেতাকর্মীদেরও দল থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। অনাহারে অপুষ্টিতে ভুগে, বিনা চিকিৎসায় মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর খবরও আমরা কম দেখি না। এই ব্যর্থতা আমাদের অবশ্যই ঘোচাতে হবে।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়েই আমরা একদিন দেশ স্বাধীন করেছি। তবে স্বাধীনতার চার যুগ পর এসে আমরা দেখছি এক অসম সমাজ। দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার সুযোগে কিছু লোকের হাতে সম্পদ ক্রমাগত বাড়ছে। কিছু লোক ব্যাংকগুলোকে একরকম জিম্মি করে ফেলেছে। সাধারণ মানুষ ঋণের অভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। অথচ প্রভাবশালী মহল ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়েও শাস্তি এড়ানোর সুযোগ পায়। ব্যাংকে যে এই লুটপাট চলে এর সঙ্গে দরিদ্র কিংবা মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী জড়িত নয়। দেশ এগিয়েছে ঠিক, তবে দরিদ্রদের জীবনে যে পরিবর্তন ঘটছে, তা সামান্য। তাই এই দরিদ্রদের জন্য গৃহীত ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্যোগটি কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। সাংবিধানিকভাবে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। তাই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা অসচ্ছল, দুবেলা অন্ন সংস্থানের মতো উপার্জন বা সাধ্য যাদের নেই, তাদের দায় রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়। এ হিসেবে সরকার ১০ টাকায় চাল বিক্রির পদক্ষেপ নিয়ে সংবিধানের নির্দেশনাই পালন করেছে।
খাদ্যে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই শস্যভাণ্ডারে সবার ভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.