প্রায় একই প্রজন্মের ক্রিকেটার তাঁরা। তবু কত অমিল কুমার সাঙ্গাকারা আর থিলান সামারাবীরায়! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগে প্রথমজনের গলায় ছিল কীর্তির মালা। ১৩৪ টেস্টে ১২৪০০ রান, ৪০৪টি ওয়ানডেতে ১৪২৩৪। টেস্টের রানটা তো ক্রিকেট ইতিহাসেরই পঞ্চম সর্বোচ্চ। ৩৮টি সেঞ্চুরি করেছেন, যার ১১টিই ডাবল। সর্বোচ্চ ৩১৯ রানের ইনিংসটা এই বাংলাদেশেই। সামারাবীরার অর্জন সে তুলনায় কিছুই নয়। ৮১ টেস্টে ৫৪৬২ রান। ডাবল সেঞ্চুরি বলতে ২০০৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে পরপর দুই টেস্টে ২৩১ ও ২১৪। ওয়ানডের পারফরম্যান্স বলার মতোই নয়। ৫৩ ম্যাচে ৮৬২ রান। খেলোয়াড়ি জীবনে সাঙ্গাকারা যতবারই বাংলাদেশে এসেছেন, বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা প্রায় সববারই দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁর। কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচের পর শ্রীলঙ্কার এই ব্যাটসম্যানকে ঘিরে বাংলাদেশ দলের তিন-চারজন ব্যাটসম্যান কথা বলছেন, এই দৃশ্য বহুবার দেখা গেছে। বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারের কাছেই সাঙ্গাকারা আদর্শ, তবে তাঁর সতীর্থ সামারাবীরাকে তাঁরা পেলেন কোচ হিসেবেই। সাঙ্গাকারার মতো ‘তলোয়ার’ হয়তো হয়ে উঠত না সামারাবীরার ব্যাট, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের জন্য ওই ব্যাটিং থেকেই শেখার আছে অনেক কিছু। সেটা যতটা না টেকনিক্যাল, তার চেয়ে বেশি সামারাবীরার ধৈর্যশীল মানসিকতাটাকে নিজেদের ব্যাটিংয়ে নিয়ে আসা। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে প্রথম দিন কাটানোর পর সামারাবীরাও বললেন, ‘আমি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়েই বেশি গুরুত্ব দেব। টেকনিক্যাল দিকটা আমার দেখাই আছে, এটিতে গত দেড় বছরে তারা অনেক উন্নতি করেছে। আমি তাই আপাতত মানসিকতার উন্নতি নিয়েই কাজ করব।’ নেটে কাল সৌম্য সরকার খুব সংগ্রাম করছিলেন। অন্য প্রান্তে ঠায় দাঁড়িয়ে সেটা দেখছিলেন সামারাবীরা। পরে তামিমের ব্যাটিংয়ের সময়ও মনোযোগী দর্শক। ইমরুল কায়েস কী একটা বিষয়ে নিজেই গিয়ে কথা বললেন তাঁর সঙ্গে। সব মিলিয়ে কাল প্রথম দিনটা মূলত দেখেই গেলেন সামারাবীরা, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো দলের সঙ্গে কাজ করাটা সব সময়ই রোমাঞ্চকর। প্রথম দিনে খেলোয়াড়দের চেনার চেষ্টা করেছি। এখানে চার-পাঁচজন খেলোয়াড়ের বিপক্ষে আমিও খেলেছি। কয়েকজনকে নতুন দেখলাম। যত দিন যাবে, ততই আমার কাজটা সহজ হয়ে উঠবে।’ দূর থেকে হলেও বাংলাদেশ দলের ওপর দৃষ্টি ছিল সামারাবীরার। গত দেড় বছরের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়—এসব দেখেই তিনি মাশরাফির দলের ভেতর ঘটে যাওয়া পরিবর্তনটা ধরতে পারছেন। আর এই সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা দেখছেন কোচিং স্টাফের স্বাধীনতাকে, কোচিং স্টাফ খেলোয়াড়দের যে স্বাধীনতাটা দিচ্ছে, সেটাকেও। বাংলাদেশ দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের খুব কাছের মানুষ সামারাবীরা। হাথুরুসিংহের মাধ্যমেই তাঁর বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পরামর্শক হওয়া। তবে সামারাবীরা এই অগ্রজের কাছে কৃতজ্ঞ আরও আগে থেকে, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমি ছিলাম একরকম ক্রিকেটার। ২০০৬ সালে দল থেকে বাদ পড়ার পর চন্ডিকার সঙ্গে দেখা করি। এরপর আমি হয়ে গেলাম আরেক রকম ক্রিকেটার। আমি জানি তার পক্ষে কী করা সম্ভব। সে কারণেই তার সঙ্গে কাজ করাটা আমার পছন্দ। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমার গড় ৫০ থেকে ৬০ হয়ে গেল। আমার টেকনিকের উন্নতিতে এবং আমার সামর্থ্যটা আরও ভালোভাবে প্রকাশে অনেক সাহায্য করেছেন তিনি।’ বিসিবির সঙ্গে সামারাবীরার চুক্তি আপাতত ইংল্যান্ড সিরিজ পর্যন্ত। তবে তাঁর কথায় আভাস মিলল, দুই পক্ষ দুই পক্ষের ওপর সন্তুষ্ট থাকলে এই মেয়াদ বাড়তেও পারে। আপাতত সামারাবীরার সব চিন্তা অবশ্য আফগানিস্তান সিরিজ নিয়েই। এই সিরিজের আগে লম্বা সময় ওয়ানডেতে নেই বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে আফগানিস্তান সিরিজ খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে ধাতস্থ হতে সাহায্য করবে মনে করেন সামারাবীরা। ধাতস্থ হওয়ার ব্যাপার আছে তাঁরও এবং সেটা বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে। কোনো দলের কোচ হিসেবে ভালো করতে হলে আগে সে দেশের সংস্কৃতিটা বোঝা জরুরি—এই হলো কোচ থিলান সামারাবীরার দর্শন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.