বাংলাদেশের মাটিতে আজ বিকালেই পা রাখবে আফগানিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দল। টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রস্তুতি নিতে আফগানরা রয়েছে ভারতে। তাই সেখান থেকে জেট এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসবে আইসিসির এ সহযোগী দলটি। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান ক্রিকেট দল ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ১২টি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। এর মধ্যে পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়েই ছিল টেস্ট খেলুড়ে দেশ। তাই তাদের ১৩তম সিরিজটি হবে তৃতীয় টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তাদের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ। ৩ ম্যাচের দিবারাত্রির এ সিরিজটি মাঠে গড়াবে ২৫শে সেপ্টেম্বর থেকে। সবক’টি ম্যাচই হবে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। অন্যদিকে ১৯৯৮ থেকে এ পর্যন্ত ৬২টি ওয়ানডে সিরিজ খেলা টাইগাররা ওয়ানডেতে আফগানদের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়েছে দুই বার। তবে ২০১৪ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম দেখাতেই পরাজয়ের লজ্জা উপহার দিয়েছিল আফগানরা। অবশ্য ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দ্বিতীয় দেখাতে সেই হারের প্রতিশোধ নিয়েছে টাইগাররা। কিন্তু দেশের মাটিতে আফগানদের বিপক্ষে হারের লজ্জা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে তারা। তাই এ ওয়ানডে সিরিজটি মাশরাফি বাহিনীর জন্য সেই লজ্জা ভোলানোর মিশন। আর সিরিজের সব ম্যাচ জিতে নিতে পারলে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে কিছু পয়েন্ট যোগ হবে বাংলাদেশ দলের। ২০১৪ এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ওয়ানডেতে প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ দল। টসে জিতে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম আফগানদের পাঠিয়েছিল ব্যাটিংয়ে। কিন্তু মুশফিক বাহিনীকে চমকে দিয়ে আসগর অপরাজিত ৯০ ও সামিউল্লাহ শানওয়ারির ৮১ রানে ভর করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৫৪ রান সংগ্রহ করে। জবাব দিতে নেমে দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও শামসুর রহমান শুভ ফিরে যান কোনো রান না করেই। কিছুটা হাল ধরে ছিলেন মুমিনুল হক সৌরভ। দলের পক্ষে এক মাত্র ফিফটি তার ব্যাট থেকেই। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের মারমুখী দায়িত্ব-জ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের লজ্জার হার ত্বরান্বিত হয়। শেষ পর্যন্ত ৩২ রানে দূরে গুটিয়ে যায় তারা। সেই হারের স্মৃতি থেকে সতীর্থদের সতর্ক হওয়ার বার্তা দিলেন ওপেনার শামসুর রহমান শুভ। এবার অবশ্য তিনি দলে নেই। চানতে চাইলে শুভ বলেন, ‘প্রথম বিষয় হচ্ছে ইচ্ছে করে কেউ হারতে চায় না। আমরাও জিতার জন্যই মাঠে নেমেছিলাম। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, আমরা সামর্থ্যের ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারিনি। তাই আমি এটাই বলতে চাই, আফগানিস্তান টেস্ট খেলুড়ে দেশ না হলেও তাদের হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’ অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ দল আফগানদের চেয়ে এগিয়ে আছে। তারপরও শুভ মনে করেন আফগানরা গত দুই বছর ওয়ানডেতে যে সাফল্য পেয়েছে আর উন্নতি করেছে সেটি বাংলাদেশকে লক্ষ্য রেখে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ জুলাই পর্যন্ত আফগানরা ৩০টি ওয়ানডে খেলে। তার মধ্যে জয় এসেছে ১৩টিতে। এর মধ্যে টেস্ট খেলুড়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতেছে ৬ বার। জিম্বাবুয়ের মাটিতেও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে আফগানরা। আফগানদের এই রেকর্ড নিয়ে শুভ বলেন, ‘আমরা অনেক অভিজ্ঞ দল। ওয়ানডেতেও আমরা বেশ শক্তিশালী কিন্তু আফগানরাও কিন্তু গত দুই বছর বেশ উন্নতি করেছে। তারা জিম্বাবুয়েকেও সিরিজ হারিয়েছে। এছাড়া এ বছর কিন্তু আমাদের ওয়ানডে খেলা হয়নি। আফগানিস্তান কিন্তু এই বছর ৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। এই বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমি বলতে চাইছি, আমাদের কোনোভাবেই ওদের সুযোগ দেয়া চলবে না। ছোট দল ভেবে হালকাভাবে নেয়া চলবে না।’ ২০১৪ সালের হারটিকে শুভ অবশ্য দুর্ঘটনাই বেশি মনে করেন। তবে স্বীকার করে নেন আর একটু সিরিয়াস থাকলে হয়তো এমন দুর্ঘটনা হতো না। তিনি বলেন, ‘ব্যাট করার সময় কিন্তু প্রত্যেকেই সিরিয়াস থাকে। কখনও কখনও দুই একটা শট এমন হয়- সেটিতে মনে হয় যে, খুব সাধারণ হয়ে গেছে। আর সেই সময় আউট হলেই ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে অভিযোগটা আসে। আমাদের সবার চেষ্টাই ছিল জেতার। কিন্তু আমরা অনেক সাধারণ শট খেলে আউট হয়েছি বলেই মনে হয়েছে- আমরা দায়িত্ব নিতে পারিনি।‘ আফগানদের বিপক্ষে সিরিজটি মাশরাফি বাহিনীর জন্য যে কঠিন চ্যালেঞ্জ তা নির্বাচকরাই জানিয়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে তারা আফগানদের বিপক্ষে বাছাই করেছেন সেরা টাইগারদের একাদশও। যদিও শুক্রবারের আগে হয়তো দল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে না। তবুও প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন, ‘আফগানিস্তানকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। তাই দল নিয়ে কোনো পরীক্ষা না করে আমরা সেরা দলই ঘোষণা করবো।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.