সিরিয়ায় গত সোমবার রাতে ত্রাণ সাহায্য বহনকারী ট্রাকের বহরে হামলার পর গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে বিমান হামলা শুরু হয়েছে। ওই হামলার পর গতকাল জাতিসংঘ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সব ধরনের ত্রাণবাহী বহরের চলাচল স্থগিত করেছে।
বিমান হামলা ও যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর আশা ক্ষীণ হয়ে গেল। সোমবারই এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়।
সোমবার রাতে জরুরি ত্রাণবাহী ৩১টি ট্রাকের বহরে বিমান হামলা চালানো হয়। হামলায় সিরিয়ার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্থানীয় এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ নিহত হন অন্তত ২০ জন। সবাই ত্রাণকর্মী। এখানে জাতিসংঘ ছাড়াও রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা ছিলেন। হামলায় ১৮টি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বহরে আটা, পোশাক ও জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী ছিল। গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের মুখপাত্র জঁ লেয়ার্কে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ত্রাণের বহর চলাচল স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘জরুরি নিরাপত্তাব্যবস্থা হিসেবে সিরিয়ায় এখন থেকে সব রকমের ত্রাণের বহর চলাচল স্থগিত ঘোষণা করা হলো।’ বিভিন্ন অবরুদ্ধ এলাকায় ত্রাণ-সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে এর আগে সিরিয়ার সরকারের কাছে থেকে অনুমতি নিয়েছিল জাতিসংঘ।
১২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ৭ দিনে ২৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। ত্রাণবহর স্থগিত করার পাশাপাশি এ হামলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান স্টিফেন ও’ব্রায়ান বলেন, এই ধরনের নগ্ন হামলা যদি ইচ্ছাকৃত বলে প্রমাণিত হয়, তবে এটাকে যুদ্ধাপরাধ বলে চিহ্নিত করা হবে।
জাতিসংঘের সিরিয়াবিষয়ক দূত স্তেফান দো মিস্তুরা বলেন, ‘হামলায় আমরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর অবরুদ্ধ মানুষের জন্য ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।’ জাতিসংঘ বলেছে, আলেপ্পোর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহর উরুম আল-কুবরায় ত্রাণবাহী ট্রাকের বহরে হামলা হয়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি তারা।
এ অবস্থার মধ্যে গতকাল রাতে নিউইয়র্কে সিরিয়ার শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে রুশ-মার্কিন আলোচনা হওয়ার কথা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এই আলোচনাকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বন্ধে ‘শেষ সুযোগ’ হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। যদিও সিরিয়ার বিভিন্ন অংশ থেকে তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। সিরিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে অন্তত ৩৯ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় লড়াইটি চলছে আলেপ্পোতে। এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে আছে দুই বাহিনীর মধ্যকার লড়াইয়ে।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতির যে চুক্তি হয়েছিল তার অন্যতম শর্ত ছিল ত্রাণ-সহায়তা পৌঁছানোতে কোনো বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে মাত্র তিনবার ত্রাণ পাঠানো হয়। আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চল পুরো সিরিয়া থেকে এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.