নয় বছর বয়সী কিশোর রবিউল আওয়াল ইমন। কাওরান বাজারের আম্বর শাহ মসজিদের দোতালা জামিয়া মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল সে। ইমন ছিল আবাসিক ছাত্র। মাদরাসার ছাত্ররা প্রত্যেক শুক্রবার জুমার নামাজের পর বাবা ও মায়ের কাছে যায়। আবার পরের দিন সকালে মাাদরাসায় ফিরে। জুমার নামাজের পর মাদরাসা থেকে ইমন বাবা ও মায়ের কাছে যাচ্ছিল। কিন্তু, বাসায় ফেরার আগেই যাত্রীবাহী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে চলে গেল তার প্রাণ। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর কাওরান বাজারের ওয়াসা ভবনের সামনের রাস্তায়। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশ মিরপুর থেকে গুলিস্তানগামী ‘ওয়েলকাম পরিবহনের’ বাসাটিকে আটক করতে পারলেও চালককে আটক করতে পারেনি। চালক পালিয়ে গেছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনাস্থল রাস্তার বিপরীত পাশের আবাসিক এলাকায় ইমনের পরিবার থাকে। পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর ২টার দিকে তেজগাঁও থানাধীন কাওরান বাজারের ওয়াসা ভবনের সামনের রাস্তা পার হওয়ার সময় গুলিস্তান থেকে মিরপুরগামী ওয়েলকাম পরিবহনের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয় ইমন। ওই বাসের চাকা তার মাথায় ওপর দিয়ে চলে যায়। পরে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। তার বাবা ও মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। নিহতের বাবা সাইদুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢামেক হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, তেজগাঁও থানাধীন মাজারগলির ১৪/১ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতো ইমন। কাওরানবাজারের আম্বরশাহ মসজিদের দোতলায় মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল ইমন। প্রত্যেক শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে বাবা ও মায়ের কাছে আসতো ইমন। তিনি আরও জানান, জুমার নামাজের পর তার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। পরে হাসপাতাল থেকে আমাদের ফোন দিয়ে জানানো হয়, তাদের ছেলে ইমন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। পরে হাসপাতালে এসে শুনি ইমন মারা গেছে। ইমনের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদির চমকপুর এলাকায়। তারা তিন ভাই তিন বোন। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, ওই শিশুর মাথার ওপর দিয়ে বাসের চাকা চলে যাওয়ায় সে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। তেজগাঁও থানার ডিউটি অফিসার হারুনূর রশীদ জানান, শুক্রবার হওয়ার কারণে রাস্তাটি ফাঁকা ছিল। একারণে চালক দ্রুত চালিয়ে যাচ্ছিল। ওই শিশুটি পাশের আন্ডারপাস দিয়ে না গিয়ে দ্রুত রাস্তা পার হওয়ার সময় ওয়াসা ভবনের সামনের রাস্তার ডিভাইডারের ফাঁকা করা কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিপরীতগামী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়। তিনি আরও জানান, যাত্রীবাহী বাসটি দুর্ঘটনা ঘটানোর পর দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, স্থানীয় জনতা ধাওয়া দিয়ে ওই বাসটিকে আটক করতে পারলেও চালক বাসের জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। ওই চালকে আটকের চেষ্টা চলছে। বাসটি এখন থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.