প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার কারণেই খুন করা হয় সিলেটের কানাইঘাটের দর্জি দোকানি ইমরান হোসেনকে। গলা কেটে, হাত-পা ভেঙে লাশ বস্তায় ঢোকানো হয়। এরপর লাশ গুম করতে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। খুনের ঘটনার প্রায় ৫ দিন পর পুলিশ এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে। গ্রেপ্তার করে পরকীয়া প্রেমিকা সুহাদা বেগমকে। গতকাল বিকালে সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলামের আদালতে খুনের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে প্রবাসী বধূ সুহাদা বেগম। এদিকে, আলোচিত এ খুনের ঘটনায় কানাইঘাটে তোলপাড় চলছে। কানাইঘাটের সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মো. আবু বক্করের ছেলে কানাইঘাট পৌর শহরের চয়েস টেইলার্সের মালিক দর্জি ইমরান হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে দুর্গাপুর দক্ষিণ নয়াগ্রামের সৌদি প্রবাসী বদরুল ইসলামের স্ত্রী সুহাদা বেগমের পরকীয় সম্পর্ক ছিল। বিয়ের আগে পরিবারের সঙ্গে উপজেলা সদরের পুরাতন থানা সংলগ্ন সুরমা নদীর পারে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। আর বাসার পাশেই ছিল নিহত ইমরান হোসেনের চয়েস টেইলার্সের দর্জি ব্যবসার দোকান। এই দোকানে সুহাদা তার পরিবারের লোকজন জামা-কাপড় সেলাই করাতেন। এই সুবাদে ইমরান হোসেনের সঙ্গে প্রেমিকা সুহাদা বেগমের স্কুল জীবন থেকেই অবাধ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে তাদের এই প্রেম মেনে নিতে পারেনি সুহাদার পরিবার। এ কারণে ইমরান হোসেনের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হলেও পরিবার কোনো সাড়া দেয়নি। পরে সুহাদাকে তার পরিবারের সদস্যরা উপজেলার দুর্গাপুর দক্ষিণ নয়াগ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী বদরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের কিছুদিন পর সুহাদার স্বামী বদরুল ইসলাম সৌদি আরবে চলে গেলে সুহাদার সঙ্গে পুরনো প্রেমিক ইমরান হোসেনের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর নতুন করে তাদের এই সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যায় সুহাদার স্বামীর বাড়ির লোকজন। পরকীয়ার বিষয়টি সুহাদার আত্মীয়স্বজনদের জানানো হলে তারা ইমরান হোসেনকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেন। এতে কর্ণপাত না করায় তারা উভয় পরিবারই পরকীয়া প্রেমিক ইমরান হোসেনের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এদিকে, গত সোমবার রাতে সুহাদা বেগমের ছোটো ভাই ইমরান আহমদ কৌশলে দর্জি দোকানি ইমরান হোসেনকে নিয়ে দাওয়াত খেতে সুহাদার শ্বশুর বাড়িতে যায়। এরপর দর্জি দোকানি ইমরান আর বাড়ি ফিরেনি। তার কোনো সন্ধান না পেয়ে নিখোঁজের দুই দিন পর পিতা আবু বক্কর কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও ছেলের সন্ধান না পেয়ে গত শুক্রবার সকালে তিনি কানাইঘাট থানায় সুহাদা বেগম ও তার ভাই ইমরান আহমদ, দেবর মাসুম আহমদ ও লক্ষীপ্রসাদ গ্রামের উমর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের নাম উল্লেখ করে মামলয় করেন। মামলা করার পর কানাইঘাট থানা পুলিশ ইমরান হোসেন নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনের জন্য অভিযান শুরু করে। অভিযানের শুরুতেই তারা সুহাদা বেগমের দেবর মাসুম আহমদ ও নিকটাত্মীয় জাহাঙ্গীর আহমদকে গ্রেপ্তার করে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই প্রেমিকা সুহাদা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে, গ্রেপ্তারের পরপরই সুহাদা বেগম পুলিশের কাছে খুনের ঘটনার স্বীকারোক্তি দেয়। এবং তার স্বীকারোক্তি মতে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কানাইঘাট থানা পুলিশ সুহাদার শ্বশুরবাড়ির পুকুর থেকে নিহত ইমরান হোসেনের লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, নিহত ইমরানের লাশ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছিল। কানাইঘাট থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, আটককৃত সুহাদা বেগম, তার দেবর মাসুম আহমদ ও ইমরান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারা উভয়েই শলাপরামর্শ করে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তিনি বলেন, ইমরান হোসেন খুনের ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল সিলেটের আদালতে প্রেরণ করা হলে সুহাদা বেগম আলোচিত এ খুনের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। কানাইঘাট থানা পুলিশের এসআই জুনায়েদ জানিয়েছেন, সুহাদা বেগম এই খুনের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি গ্রহণের পর তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.