শীর্ষেন্দু বিশ্বাস পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদী পার হয়ে তাকে গ্রামের বাড়ি যেতে হয়। খরস্রোতা পায়রা পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় নৌকা কিংবা ট্রলার ডুবে যায়। তাই শীর্ষেন্দু প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে পায়রা নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছিল। এ চিঠির জবাবও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নদীতে সেতু নির্মাণের। বিষয়টি এখন জেলা ছাপিয়ে আলোচনায় দেশজুড়ে। একজন ক্ষুদে শিক্ষার্থীর চিঠির জবাব দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন অনেকে। এটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন তারা। শিশু শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাস তার চিঠিতে লিখে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আমি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক। নাম শীর্ষেন্দু বিশ্বাস, পিতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, মাতা শিলা রানী সন্নামত। আমি পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার দাদু অবিনাস সন্নামত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীতে উপস্থিত ছিলাম। আমি আপনার পিতার শৈশব কাল রচনা লিখে তৃতীয় স্থান অধিকার করি। আমার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। আমাদের মির্জাগঞ্জ নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। এটি পটুয়াখালী জেলার একটি উপজেলা। এ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ। মানুষ ভয় পায়। কখনও নৌকা ডুবে যায় কখনও ট্রলার ডুবে যায়। এতে আমার থেকে ছোট ভাইবোন তাদের মা-বাবাকে হারায়। আমি আমার মা-বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। তাদের হারাতে চাই না। তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ যে, আপনি মির্জাগঞ্জ নদীতে ব্রিজের ব্যবস্থা করুন। তা যদি আপনি পারেন তা হলে আমাদের জন্য একটু কষ্ট করে এই ব্রিজ তৈরির ব্যবস্থা করুন। আজ আর নয়। ইতি, আপনার দেশের একজন সাধারণ নাগরিক, শীর্ষেন্দু বিশ্বাস।’ চিঠির উপরের অংশে লেখা ছিল পুরান বাজার, পটুয়াখালী। তারিখ ১৫/০৮/২০১৬ ইং। চিঠি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ই সেপ্টেম্বর স্বাক্ষর দিয়ে উত্তর পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শীর্ষেন্দুর চিঠি পেয়ে আনন্দিত হয়েছেন। করেছেন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। তিনি লিখেছেন, ‘স্নেহের শীর্ষেন্দু, তুমি শুধু দেশের একজন সাধারণ নাগরিক নও, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার অগ্রজ সৈনিক। আমি জানি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা। নিজের পিতা-মাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বুঝতে পারি তোমার বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদুর প্রভাব রয়েছে তোমার ওপর। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।’ চিঠির জবাবের শেষের দুই লাইনে প্রধানমন্ত্রী শীর্ষেন্দুসহ পরিবারের সবার মঙ্গল কামনা করে শেষ করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, ২০শে সেপ্টেম্বর চিঠিটি স্কুলের ঠিকানায় আসে। বর্তমানে চিঠিটি তার (প্রধান শিক্ষক) কাছে রয়েছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ সোমবার জেলা প্রশাসক শীর্ষেন্দুর হাতে চিঠিটি হস্তান্তর করবেন। তবে চিঠি হস্তান্তর করা না হলেও শীর্ষেন্দুর লেখা চিঠির জবাব প্রধানমন্ত্রী তাকে দিয়েছেন তা শিশু শীর্ষেন্দু ও তার অভিভাবকদের অবহিত করেছেন প্রধান শিক্ষক। এ ব্যাপারে বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। শিশু বয়স থেকে নিজেসহ অন্য মানুষকে নিয়ে ভাবনা এমন সন্তান নিয়ে কোনো বাবা-মা গর্বিত না হয়। আমি খুবই গর্বিত।’ মা শিলা রানী সন্নামত বলেন, ‘আরো ছোট বয়স থেকেই ও বেশ কৌতূহলী। সব সময় কিছু একটা করার বাসনা কাজ করে ওর মধ্যে- সেটাই দেখলাম। আমার খুব ভালো লাগছে।’ শীর্ষেন্দুর বাবা পটুয়াখালীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এবং মা শিলা রানী সন্নামত সমাজসেবা অধিদপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.