দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে নাটক, টেলিছবি, নৃত্যানুষ্ঠান, আলোচনা অনুষ্ঠান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, সেলিব্রিটি টকশোসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার হয়ে আসছে নিয়মিত। একটা সময় এসব দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন দর্শকরা। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এসব টিভি অনুষ্ঠান দর্শক হারাচ্ছে ক্রমশ। দেশীয় ড্রইংরুম মিডিয়ার কেন এই করুণ দশা- এমন প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর সহজলভ্যতা। সেসব চ্যানেলের অতি জৌলুসপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো আমাদের দেশের দর্শকরা এখন খুব সহজেই পেয়ে যাচ্ছেন বলে দেশীয় টিভি অনুষ্ঠান থেকে তারা দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে এটাই কি কারণ? এমন জিজ্ঞাসার উত্তরে পাওয়া গেছে এর পক্ষ এবং বিপক্ষ দুই ধরনেরই অভিমত। বিশিষ্টজনদের সেসব অভিমত নিয়েই সাজানো হয়েছে ধারাবাহিক এ প্রতিবেদন। গ্রন্থনা করেছেন মারুফ কিবরিয়া
শর্মিলী আহমেদ একটা কথা আগেই বলা ভালো। দর্শক কি দেখবেন না দেখবেন সেটা একান্তই তাদের ব্যাপার। রিমোর্ট তাদের হাতে। তারা স্বাধীন। এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। যে কথা বলা হচ্ছে ভারতীয় চ্যানেলের সহজলভ্যতায় দর্শক দেশীয় চ্যানেল থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এটা পুরোপুরি মানা যায় না। কারণ এ মুহূর্তে আমাদের চ্যানেলের অনুষ্ঠান প্রায় ৭০ ভাগ দর্শকই দেখেন বলে আমি মনে করি। একজন দর্শক টিভি সেটের সামনে বসে ভালো ও মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান দেখার প্রত্যাশাই করেন। আমার মতে সেটা তারা এখন পাচ্ছেন। এই সমস্যা কিছুদিন আগে ছিল। যখন দর্শক ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়াল দেখতেন। সেটা নিয়েই সারা দিন ছিল মাতামাতি। কিন্তু এখন সেটা সংখ্যায় কমেছে অনেকখানি। আমি তো নাটকের মানুষ। সে জায়গা থেকে বলবো টিভি নাটকের মান আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। গল্পও ভালো হচ্ছে। সে সঙ্গে অন্য অনুষ্ঠান যেমন: নৃত্যানুষ্ঠান, ম্যাগাজিন কিংবা গেম শোগুলো বেশ ভালো হচ্ছে। আর সেটা দর্শকও দেখছেন। একটা সমস্যা হয় যেটা হলো- বিজ্ঞাপন। নাটকের মাঝে বিজ্ঞাপন বেশি প্রচার হওয়ায় দর্শক বিরক্ত হন। এছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই বলেই আমার মনে হয়।
রাইসুল ইসলাম আসাদ ভারতীয় চ্যানেলের সহজলভ্যতা হলে আমার দেশের কি! দরজা-জানালা খোলা। বিদেশি চ্যানেল আসছে, সমপ্রচার হচ্ছে। আমি-আপনি চাইলে কি সেটা বন্ধ করতে পারবো! আর সব চ্যানেলই দর্শকের দেখার অধিকার রয়েছে। তাদের যা দেখানো হবে সেটাই দেখবে। ভারতীয় চ্যানেল কিংবা চায়না চ্যানেলই আমাদের এখানে সমপ্রচার হোক না। তাতে অসুবিধা তো নেই। আসল সমস্যায় আসুন। দর্শক কেন আমাদের চ্যানেল দেখবে না সেটা নিয়ে কথা বলুন। একটা অনুষ্ঠান প্রচারে এলে বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু যে হয় তা আর থামে না। শুধু তাই নয়। টেলিভিশনের ডানে-বামে ও নিচে স্ক্রল আকারেও বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। তখন নাটক চলে যায় টিভি স্ক্রিনের এক কোণে। তাহলে দর্শক কেন দেখবে? আরেকটা কথা হলো আমরা কি বানাচ্ছি কি করছি আর কিভাবে সেটা উপস্থাপন করছি সেসব নিয়ে আগে ভাবতে হবে। অযথা বিদেশি চ্যানেলের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সারা বিশ্বে এক দেশের চ্যানেল অন্য দেশে সমপ্রচার হচ্ছে। এ নিয়ে কোনো যুক্তিতর্কে যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আগে নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। তাহলেই দর্শক দেশীয় চ্যানেন দেখবেন।
শম্পা রেজা আমাদের চ্যানেলগুলো সব এই ঘরানার। কয়েকটি নিউজ চ্যানেল, আর একটি গানের চ্যানেল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাকিরা সবাই একই ধাঁচের। এক চ্যানেলেই নাটক, গান, নিউজ, নাচের অনুষ্ঠানের মিশ্রণ। আপনি একবার কলকাতার চ্যানেলের দিকে নজর দিন। দেখবেন সিরিয়ালের চ্যানেল শুধু সিরিয়াল আর গানের চ্যানেলে শুধু গানই চলছে। ওদের সুষ্ঠু নিয়মনীতি রয়েছে। যা আমাদের এখানে নেই। বিজ্ঞাপনের ওপর একটা নিয়ম দেখা যায় ওখানে। আর আমাদের এখানে যার ওপর কোনো নিয়ম তো নেই বরং নিয়ন্ত্রণেরও বালাই নেই। আমি তো কলকাতায় পড়েছি। সেখানে একসময় আমাদের বিটিভির নাটক দেখার জন্য মানুষ বাড়ির ছাদের ওপর অ্যান্টেনা ব্যবহার করতো। আর এখন আমাদের দর্শকরা তাদের সিরিয়াল ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তাই বলছি, আগে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর একটা সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োজন। যা করলে দর্শক ফেরানো সম্ভব হবে।
গিয়াস উদ্দিন সেলিম এটা তো বড় একটা ইস্যু। স্বল্প সময়ে স্বল্প কথায় বলে সব শেষ করা যাবে না। আর একটু প্রিপারেশনেরও দরকার। তবে এটুকু বলতে পারি আমাদের চ্যানেলগুলো ভারতীয় কিংবা বিদেশি চ্যানেলের সঙ্গে একটা প্রতিযোগিতা করছে। সেখানে কতটুকু এগিয়ে যেতে পারছে তা বলা খুব কঠিন। কিন্তু যে প্রতিযোগিতাটা হচ্ছে সেটা সুস্থ নয়। দর্শককে চ্যানেলের মধ্যে আটকে রাখতে হলে অবশ্যই ভালো কিছু কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.