বখাটে যুবকের উৎপাত সইতে না পেরে নাসিরনগরে ডালিয়া আক্তার (১২) নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার আগে ওই ছাত্রী একটি চিরকুটও লিখে গেছে। উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের ভলাকুট গ্রামে গত রোববার বিকালে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ডালিয়ার লাশ উদ্ধার করেছে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, প্রত্যন্ত ভলাকুট গ্রামের ফেলু মিয়ার মেয়ে ডালিয়া। স্থানীয় কেবি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। আর একই গ্রামের সমুজ আলীর বখাটে ছেলে হামিদ (১৯)। দরিদ্র পরিবারের সন্তান ডালিয়া যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো তখন থেকেই তার পিছু লাগে বখাটে হামিদ। বিদ্যালয়ে যাওয়ার আসার পথে হামিদ দীর্ঘদিন ধরে ডালিয়াকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। হামিদ তার সহপাঠীদের নিয়েও ডালিয়াকে অনেক বিরক্ত করেছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর হামিদের যন্ত্রণা আরো বেড়ে যায়। তার মা-বাবার কাছে বিচার দিয়ে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এসব বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। মেয়ের নিরাপত্তার চিন্তা করে ফেলু মিয়া ডালিয়াকে ঢাকায় তার বড় ছেলের বাসায় অনেক দিন রেখেছেন। পরে পরীক্ষার জন্য বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বখাটে হামিদ ডালিয়াকে কুপ্রস্তাব দেয়। বিষয়টি সহ্য করতে পারেনি ডালিয়া। একপর্যায়ে ডালিয়া স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। গত রোববার রাতে ডালিয়া একটি চিরকুট লিখে- ‘স্থানীয় বখাটে হামিদের উত্ত্যক্ত সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করছে।’ রোববার রাতে ডালিয়া গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘরে প্রবেশ করেই তার পরিবারের লোকজন ডালিয়ার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ডালিয়ার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। ডালিয়ার মা পারুল বেগম বলেন, ‘হামিদ আরো এক বছর আগ থেকেই আমার মেয়ে ডালিয়ার পেছনে লেগে আছে। লজ্জায় লোকজনকে জানায়নি। তারপরও সালিশ হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় আইনি সহায়তাও পাইনি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। বখাটে হামিদের বিচার চাই।’ ভলাকুট কেবি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ডালিয়ার সহপাঠীদের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি। এই রকম মৃত্যু কারো কম্য নয়। ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ডালিয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। ভলাকুট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম বাকি বিলাহ জুয়েল জানান, এলাকার বখাটে যুবক হামিদ স্কুলে যাতায়াতের সময় প্রায়ই ডালিয়াকে উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ হয়েছে। কিছুদিন আগে ডালিয়ার অভিভাবকরা নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে কয়েকদিন পর বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপরও উত্ত্যক্ত করা বন্ধ হয়নি। বখাটে হামিদের দেয়া কুপ্রস্তাব ও উত্ত্যক্ত সইতে না পেরেই ডালিয়া আত্মহত্যা করেছে। এর আগে সে একটি চিরকুটে হামিদকে অভিযুক্ত করে আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করে গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাদের বলেন, স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার খবর পেয়ে রাতেই স্থানীয় চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে। এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত চলছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.