যকৃৎ হলো আমাদের শর্করা, চর্বি, আমিষসহ সব ধরনের খাদ্য উপাদানের বিপাকক্রিয়ার কারখানা। কখনো যকৃৎ এই উপাদান ভেঙে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে, কখনো আবার তা জমিয়ে রাখে। আজকাল এই কথাটা প্রায়ই শোনা যায় যে যকৃতে চর্বি জমেছে। এটা কি আসলে কোনো রোগ? যকৃতে চর্বি জমাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার। ৯০ শতাংশ স্থূল বা ওজনাধিক্য ব্যক্তির এই সমস্যা পাওয়া যায়। স্থূলতা ছাড়াও টাইপ-২ ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য আছে এমন ব্যক্তি, অ্যালকোহল পানকারী ব্যক্তিদের যকৃতে চর্বি জমতে দেখা যায়। ওজন বেড়ে গেলে দেহে ইনসুলিন হরমোনের অকার্যকারিতা দেখা দেয়, ফলে যকৃৎ সঠিকভাবে চর্বিকে বিপাক করতে বা নিষ্কাশন করতে ব্যর্থ হয়। এতে সেখানে চর্বি জমে। সাধারণভাবে এতে শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। কখনো অন্য কারণে আলট্রাসনোগ্রাম বা যকৃতের এনজাইম পরীক্ষা করলে বিষয়টা ধরা পড়ে। এমনিতে এই চর্বি হয়তো তেমন ক্ষতি করে না, কিন্তু কখনো কখনো এটি যকৃতে প্রদাহ করে, যাকে বলে ন্যাশ। কিছু কিছু ন্যাশ আবার পরে লিভার সিরোসিসে পরিণত হয় ও জটিল আকার ধারণ করে। এ ছাড়া যকৃতে চর্বি জমা মানে আপনার দেহে ইনসুলিন অকার্যকারিতা রয়েছে; যার ফলে পরবর্তী সময়ে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, পলিসিস্টিক ওভারি, রক্তে চর্বি সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে বা ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে। তার মানে যকৃতে চর্বি জমাটা ভালো লক্ষণ নয়।
তাহলে এই সমস্যা থেকে প্রতিকার কী? প্রথম কথা হলো ওজন বাড়তে দেবেন না। উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওজন স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করুন। কেবল ওজন নয়, পেটে চর্বি বাড়লে অর্থাৎ ভুঁড়ির মাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে এসব সমস্যা বাড়ে। তাই পেট মেদহীন রাখতে হবে। যত বেশি কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম করবেন, তত ইনসুলিন অকার্যকারিতার সমস্যাটি কমবে। তাই সচল থাকুন। যকৃতে চর্বি কমানোর নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই, তাই হাঁটুন, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করুন, দেহের মেদ কমান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.