হাসপাতালে দুদকের ঝটিকা সফর
বেলা পৌনে দশটা। রোগীদের ভিড়। কিন্তু নেই চিকিৎসক। আকস্মিকভাবে পাওয়া যায় মাত্র একজন চিকিৎসককে। এমন অবস্থা নোয়াখালী জেলার কবিরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের এক ঝটিকা সফরে এমন পরিস্থিতির দেখা মেলে। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দুদক। অন্যদিকে জেলার আরেক উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা অভিযোগ করেন, তারা সরকারি ওষুধ পান না। সেখানেও ডাক্তারদের দেখা মেলে না। এ বিষয়টিও ক্ষতিয়ে দেখা হবে বলে দুদক জানায়। দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল পৌনে ১০টায় দুদক কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম সরেজমিনে করিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যান। আকস্মিক পরিদর্শনকালে মাত্র একজন চিকিৎসককে উপস্থিত পাওয়া যায়। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায়নি। দুদক কমিশনার তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি স্থানীয় সিভিল সার্জনকে অবহিত করেন। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি। এরপর বেলা ১১টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন তিনি। এখানে রোগীরা কমিশনারকে জানান, কোনো রোগীই সরকারি ওষুধ পান না এবং নিয়মিত ডাক্তার থাকেন না। কমিশনারের জিজ্ঞাসার জবাবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, সরকারি ওষুধের সরবরাহ না থাকায় রোগীদের ওষুধ দেয়া হয়নি। কমিশনার এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ ও এএফএম আমিনুল ইসলাম। মতবিনিময় সভায় কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এজন্য সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। এ সময় আরেক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম উপস্থিত সকলকে দুর্নীতি না করা এবং দুর্নীতিকে সহযোগিতা না করার শপথবাক্য পাঠ করান। উপস্থিত সকলেই দুর্নীতিমুক্ত থাকার অঙ্গীকার করেন। জমি ও অর্থ আত্মসাতে ৮ জন গ্রেপ্তার: এদিকে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জমি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৮জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে দুদক। এদের মধ্যে ভূমি কর্মকর্তাও ছিলেন। দুদক জানায়, সরকারি ও ব্যক্তিগত জমি অন্যের নামে নামজারি করে আত্মসাতের অভিযোগে নেত্রকোনা থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়। এরা হলেন- নেত্রকোনা সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা বিনয় চন্দ্র সেন, মনিরুল হক, বদরুজ্জামান খান ও হোসেন আরা খানম রানী। এদিকে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে মেসার্স ইন্টারন্যাশনাল ট্যানারির মালিক ফজুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ১৯৯৮ সালে রূপালী ব্যাংক থেকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য মর্টগেজকৃত জমির মূল দলিল জমা না দিয়ে ব্যাংক থেকে ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ওই ঋণ ফেরত দেয়ার জন্য ব্যাংকের তরফ থেকে তাকে বারবার তাগাদা দেয়া হয় এবং সুদ মওকুফ করা হয়। এমনকি অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা টাকা প্রদানের জন্য রায় প্রাপ্তির পরও টাকা জমা দেননি। এ টাকা দিয়ে ঢাকায় একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণ করে বিলাসী জীবন-যাপন করছেন তিনি। এই অভিযোগে ২০০২ সালে তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম আসামিকে গ্রেপ্তার করেন। এছাড়া এফডিআর এর বিপরীতে ঋণ দেখিয়ে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ১৭০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সিলেট থেকে ৩ জন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- সিটি ব্যাংকের সাবেক ভাই প্রেসিডেন্ট মো. মুজিবুর রহমান, সিটি ব্যাংক সিলেট জিন্দাবাজার শাখার ক্যাশ ইনচার্জ মো. গিয়াসউদ্দীন ও সাবেক কাস্টমার সার্ভিস অফিসার মো. সাজ্জাদুর রহমান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.