এবারের রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সবার নজর ছিল ৮ বছর বয়সী থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে’র দিকে। পারকিউশিওনিস্ট উইলসন দাস নেভেসের সঙ্গে মঞ্চে সাম্বা নেচেছিল এত্তটুকুন এই ছেলেটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে আলোকিত করে দিলেও তার ভাগ্যে জোটেনি স্টেডিয়ামে বসে অলিম্পিকের একটি ইভেন্ট উপভোগ করার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়াযজ্ঞে স্টেডিয়ামের অনেক আসন খালি। কিন্তু সেখানে যাওয়ার সামর্থ নেই থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে’র। এর কারণ, সে বস্তির ছেলে। তাদের দিন এনে দিন খেতে হয়। ফলে আক্ষেপ নিয়েই তাকে দিন কাটাতে হচ্ছে। এ নিয়ে অলিম্পিক আয়োজকদের বেশ সমালোচনা হচ্ছে। থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে’র এই বেদনার কথা তুলে ধরেছে লন্ডনের দ্য ডেইলি মেইল। এতে বলা হয়েছে, অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঠিকঠাক পায়ের তাল মিলিয়ে সাম্বা নেচে সে কোটি কোটি মানুষের মন জয় করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধ প্রবণ এলাকার অন্যতম তার বাসস্থান। বস্তির নাম ভিলা কেনেডি। সেখানে বসবাস করে কারো এমন আয়োজন উপভোগ করার আশা করা দুরূহ। কিন্তু থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে’র কথা তো ভিন্ন। তার অবস্থা, তার ভূমিকা বিবেচনা করে আয়োজকরা তাকে একটি সৌজন্য টিকেট দিতেই পারতেন। কিন্তু স্টেডিয়ামে শত শত আসন খালি পড়ে থাকলেও তারা সেই উদারতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তার দাদী সোলিমার আন্দ্রাদে রামোস (৫৬) এর আক্ষেপ, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে’র উপস্থিতি ছিল স্বেচ্ছায়। তাকে বা তাদেরকে টিকেট দিলে সেটা খুব আনন্দের হতো। তিনি বলেন, কোন ক্রীড়া অনুষ্ঠান দেখার টিকেট কেনার সামর্থ আমাদের নেই। তার পরিবর্তে থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে’কে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বাড়িতে। তার বাড়ি ভিলা কেনেডি বস্তিতে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে সহিংস শহরের মধ্যে ১০ম শহর বাঙ্গুর পাশেই। সেখানে মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করে। ভিলা কেনেডির যে অবস্থা তা অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বা শহরের ঠিক উল্টো। সেই অন্ধকার বস্তির ছেলে থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে যখন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফিরেছে তখন প্রতিবেশীদের কাছে সে-ই হয়ে উঠেছে সেলিব্রেটি। তার সঙ্গে সেলফি তুলতে তারা লাইনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে’র কাছে এ এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। এখন সে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। গত কয়েকদিন ব্রাজিলের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম তার পিছনে ঘুরেছে। তাদেরকে অব্যাহতভাবে সাক্ষাতকার দিতে হয়েছে। উপস্থিত হয়েছে টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলোতে। তার মধ্যেও সে তার সাম্বা নাচের পারদর্শিতা প্রকাশ করেছে। থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে বলেছে, আমি যখন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে নেচেছি, তখন আমি মোটেও নার্ভাস হই নি। আমাকে কে দেখছে বা দেখছে না তা নিয়ে চিন্তাও করি নি তখন। আমাকে এ অনুষ্ঠানে বেছে নেয়ার জন্য আমি গর্বিত। চার বছর বয়স থেকেই আমি সাম্বা নাচ করি। আমি জানি আমি কি করছি। সাম্বাকে আমি ভালবাসি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠার আগে আমি চারবার রিহার্সেলে অংশ নিয়েছি। আমি বড় হয়ে একজন কোরিওগ্রাফার হতে চাই। উল্লেখ্য, তাকে সাম্বা নাচ শিখতে সহায়তা করেছেন ড্যান্সার মারকাস বানদেইরা। বিনা পয়সায় তিনি তাকে শিখিয়েছেন। তিনি তাকে নিয়ে যেতে চান আরও বড় মঞ্চে। তাই তিনি বলেন, থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে ঈশ্বর প্রদত্ত একটি উপহার। সে খুব শান্ত শিশু। এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নাম দেয়া হয়েছিল সিরিমোনিয়াস ক্যারিওকাস ২০১৬। এতে অডিশনে অংশ নিয়েছিলেন নারা গিয়ে। তিনি বলেন, এ অডিশনে ১০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল। তাদের সবার বয়স ১৮ বছরের ওপরে। সেখানে স্বেচ্ছায় মারকাস বানদেইরা নিজে নিবন্ধিত হন যাতে তিনি থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে’কে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। তিনি যখন থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে’কে পরিচয় করিয়ে দিলেন, আয়োজকরা তার নাচ দেখতে চাইলেন। থাওয়ান লুসাস দা ত্রিনদাদে নাচা শুরু করলো। তাকে দেখে তো সবাই ক্রেজি হয়ে উঠলো। সে ছিল বিস্ময়কর। সবাই তাকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য বাছাই করলো।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.