সন্তানদের নিয়ে অনেক মা-বাবারই অভিযোগের শেষ নেই। আমার ছেলে এই করছে, আমার মেয়ে এটা করছে না—কত অভিযোগ! অথচ শিশুদের ‘দোষ’গুলো ঘাঁটলে দেখা যায়, সেগুলোর পেছনে মা-বাবার দায়ই বেশি। শিশুদের আচরণ কেন খারাপ হয় এবং কী করলে মিলবে সমাধান, সেটাই জানা যাক।
১. শিশুরা যখন বিরক্ত করে ‘ও খুব বিরক্ত করে!’—প্রায়ই এমনটা বলেন মা-বাবারা। কেন বিরক্ত করে, সেটা কি ভেবে দেখেছেন? গবেষকেরা বলেন, সন্তানদের কাছে না নিলে, সব সময় খারাপ ব্যবহার করলেই এমনটা হয়! তাই যখনই সময় পান, সন্তানদের কাছে টানুন। পাশে বসিয়ে গল্প করুন। তার কথা শুনুন।
২. শিশুরা যখন মিথ্যা বলে মা-বাবাদের বড় অভিযোগের একটি হলো, ‘ও কথায় কথায় মিথ্যা বলে!’ এটার পেছনেও কিন্তু আপনার দায়ই বেশি। মা-বাবা যখন সন্তানের সব ব্যাপারেই অতিরিক্ত রাগারাগি করেন, তখনই এমনটা হয়। সব ব্যাপারে রাগারাগির ফলে সন্তান সত্য কথা বলতে ভয় পায়। তাই রাগারাগি না করে সন্তানকে বুঝতে চেষ্টা করুন।
৩. শিশুদের আত্মবিশ্বাস যখন কম মা-বাবা হয়তো সন্তানকে একটা কিছু করতে বললেন। সন্তানের চোখে অনিশ্চয়তা। কাজটা পারবে কি পারবে না, তা নিয়ে দ্বিধা। বয়স একটু কম হলে তো কেঁদেও ফেলে অনেকে। কেন এমনটা হয়, জানেন? মা-বাবা যখন উৎসাহের বদলে উপদেশ দেন বেশি, তখনই সন্তানের আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকে। অতএব উপদেশ না দিয়ে উৎসাহ দিন সন্তানকে।
৪. শিশুরা যখন ছিঁচকাঁদুনে হয় সবকিছুতেই ভয়, সবকিছুতেই শঙ্কা—এমন সমস্যা কিন্তু অনেক শিশুরই আছে। সাধারণ কোনো কিছু করতেও তারা আতঙ্কগ্রস্ত থাকে। মা-বাবা যখন সবার সামনে প্রতিনিয়ত সন্তানকে নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখান, তখন শিশুটি লজ্জা পায়। তাই সন্তানকে কখনই অন্য কারও সামনে, এমনকি নিজের অন্য সন্তানের সামনেও অপমান করবেন না।
৫. শিশুরা যখন কিছুতেই তুষ্ট নয় অল্পতেই খুশি হওয়ার মতো দারুণ একটা গুণ আর হয় না। অথচ এই গুণটাও সন্তানদের কাছ ধীরে ধীরে কেড়ে নেন অসচেতন মা-বাবারাই! সন্তান যখন কিছু না চাইতেই পেয়ে যায়, তখন থেকেই এই সমস্যার গোড়াপত্তন। এমনও হয়—ছেলেমেয়ে হয়তো একটা জিনিসের মূল্যই বোঝে না বা তাদের জন্য তা প্রয়োজনীয়ও নয়, তারপরও সেটা মা-বাবা কিনে দেন। এমন চলতে থাকলে শিশুরা একসময় কোনো কিছুতেই তুষ্ট হয় না। তাই শিশুকে কিছু একটা পছন্দ করতে দিন। তার দরকার আছে এবং পছন্দ করে, তেমন কিছু পেলেই সে অল্পতে খুশি হবে।
৬. শিশুরা যখন ভীরু হয় মানুষের ভয় থাকবেই। বিশেষ করে শিশুরা ভয় না পেলে বরং চিন্তারই বিষয়! তবে সবকিছুতেই অতিরিক্ত ভয় পাওয়া কিন্তু কাজের কথা নয়। সামান্য একটা ইঁদুর দেখলেও অনেকের দাঁতকপাটি লেগে যায়। এমন হয়—যখন মা-বাবা সন্তানকে সবকিছুতেই সাহায্য করেন। অনেক মা-বাবাই ভাবেন, আমার সন্তান কেন এই বয়সে এত কষ্ট করবে! ছোটবেলায় ছোটখাটো কষ্টেরও অভিজ্ঞতারও দরকার আছে। কষ্ট বা বাধা না পেলে সেটা অতিক্রম করার অভ্যাসই তো তার তৈরি হবে না!
৭. শিশুরা যখন হিংসুটে হয় ‘পাশের বাসার মেয়েটা দেখো, সারা দিন কী সুন্দর লক্ষ্মী হয়ে থাকে!’—এমন ‘বাণী’ সন্তানের ওপর অনেক মা-বাবাই ‘বর্ষণ’ করেন! তারা যেন মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, ‘পাশের বাসার’ ছেলেমেয়েগুলোই আদর্শ! অথবা বিশ্বাস না করলেও সন্তানদের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্যও এসব বলেন অনেকে। এটা একেবারেই অনুচিত। কারণ, এর ফলে শিশুরা হিংসা করতে শুরু করে। মনের হিংসা একসময় বাস্তবে রূপ নেয়। অন্যের ক্ষতি করার মানসিকতাও তৈরি হয় এখান থেকেই।
৮. শিশুরা যখন দ্রুত রেগে যায় কিছু বললেই খিটখিটে মেজাজ। এমনকি ভালো কথা বললেও অনেক সময় রেগেমেগে উত্তর দেয় শিশুরা। মা-বাবা যান উল্টো রেগে। শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। সন্তানকে দোষারোপ করার আগে নিজের স্বভাব পাল্টান। সন্তানের প্রশংসা না করলে এমনটা চলতেই থাকবে। প্রশংসা করতে পারাও কিন্তু চমৎকার একটা গুণ। ছোটখাটো বিষয়ে শিশুদের প্রশংসা করলে তাদের মন উদার হয়। ভালো কাজ করার উৎসাহ পায়।
৯. শিশুরা যখন অন্যের অনুভূতিকে পাত্তা দেয় না কে কী বলল, কার কী হলো, তাতে যেন কিছুই এসে-যায় না। এই সমস্যা বড়দের তো আছেই; ছোটদেরও মধ্যেও কম নেই। আপনার সন্তানের সহপাঠী হয়তো বলল, ‘সাকিব আল হাসান আমার খুব প্রিয়।’ আপনার সন্তান হয়তো খেপেই গেল সেটা শুনে! কারণ, তার প্রিয় যে তামিম ইকবাল। তাই সে ওই বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়াও করে ফেলল একচোট! এটা হয় তখনই, যখন আপনি কথায় কথায় আপনার সন্তানকে আদেশ করেন। এটা না করে সন্তানের ভালো লাগা না-লাগার গুরুত্ব দিন।
১০. শিশুরা যখন চাপা স্বভাবের হয় ভালো-মন্দ যেটাই হোক, শিশুরা হয়তো কোনো কিছুই প্রকাশ করে না। চোখের সামনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটতে দেখলেও কাউকে বলে না। ভেতরের কষ্টও ভাগাভাগি করে না কারও সঙ্গে। শিশুরা এমন স্বভাবের হয় বড়দের কারণেই। মা-বাবা যখন অতিরিক্ত রাগারাগি করেন, তখন শিশুরা মনের যেকোনো ভাবই প্রকাশ করতে ভয় পায়। তাই রাগ করবেন না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.