ওয়ানডেতে প্রথমবার সেঞ্চুরির স্বাদ পান তিনি ক্যারিয়ারের ২৭তম ম্যাচে এসে। ক্রিকেটের এ ফরমেটে তামিম ইকবালের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির জন্য ভক্তদের গুনতে হয় আরো ৩২ ম্যাচ। তবে শেষ ১৫ ওয়ানডেতে তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকালেন তামিম ইকবাল। এতে বাংলাদেশের ব্যাট হাতে ওয়ানডেতে সর্বাধিক সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন তিনি। গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১১৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন দেশসেরা এ ওপেনার। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে ১১৮ বলের ইনিংসে তামিম হাঁকান ১১টি চার ও দুটি ছক্কা।
আর সেঞ্চুরি নিয়ে তিনি ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব আল হাসানকে। ১৫৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তামিমের সপ্তম শতক। ওয়ানডেতে ১৬০ ম্যাচে সাকিবের রয়েছে ৬টি সেঞ্চুরি। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এ নিয়ে সিরিজের তিন ম্যাচেই আগে ব্যাটিংয়ে যেতে দেখা গেলো বাংলাদেশ দলকে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান আফগানিস্তান অধিনায়ক আসগর স্তানিকজাই। তবে গতকাল ব্যাট হাতে টাইগারদের শুরুটা স্বস্তির ছিল না। দলীয় ২৩ রানে উইকেট খোয়ান ওপেনার সৌম্য সরকার। আর পরিবর্তিত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাংক তিন নম্বরে ক্রিজে পাঠান সাব্বির রহমানকে। গতকাল এ সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশ দলের জন্য ফলদায়ক। দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির রহমানকে নিয়ে ১৪০ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল। দলীয় ১৬৩ রানে উইকেট দিয়ে সাব্বির বিদায় নিলেও ক্রিজে স্বরূপে বহাল থাকেন তামিম। গতকাল ব্যাট হাতে তামিম ক্রিজে কাটান ৩৮.৪ ওভার। প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার ইনিংসে তামিমকে ধৈর্যচ্যুত হতে দেখা যায় একবারই মাত্র। আফগান স্পিনার মোহাম্মদ নবীর ডেলিভারিতে ব্যক্তিগত ১ রানে তামিমের ক্যাচ ফেলেন আফগানিস্তান অধিনায়ক স্তানিকজাই। আর ফিরে তাকাননি বাঁ-হাতি ড্যাশিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। গতকাল তামিম যখন সাজঘরে ফিরছেন তখন ইনিংসের ৩৮.৪ ওভার শেষে ২১২/৩ সংগ্রহ নিয়ে অনেকটাই নিরাপদে বাংলাদেশ। গত বছর এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা দুই ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি হাঁকান তামিম ইকবাল। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে সিরিজের শুরুর দুই ওয়ানডেতে তামিমের ১৩২ ও ১১৬* রানের ইনিংসে ভর করে জয় পায় টাইগাররাই। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে তামিম করেন ৬৪ রান। আর জয় শেষে টাইগাররা ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবায় সফরকারী পাকিস্তানকে। গত বছর জুনে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও ব্যাটের ধার দেখান তামিম। ওই ম্যাচে তামিম করেন ৬০ রান। বল হাতে বাকি কাজ সারেন তরুণ পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। জয় নিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। পরের চার ওয়ানডেতে ছোট ব্যাডপ্যাচে কাটে তামিমের। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের শেষ দুই ও সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শুরুর দুই ওয়ানডেতে তামিমের ব্যাট থেকে আসে যথাক্রমে ১৩, ৫, ০ ও ৫ রান। তবে ব্যাট হাতে দ্রুতই স্বরূপে ফেরেন তামিম ইকবাল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ৬১ রান করেন তামিম। আর ওই ম্যাচে জয় শেষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজের ট্রফিও ওঠে টাইগারদের হাতে। শেষ ৭ ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের সংগ্রহ যথাক্রমে ৬১*, ৪০, ১৯, ৭৩, ৮০, ২০ ও ১১৮। গতকাল তামিমের বিদায়ের পর খেই হারান বাংলাদেশ দলের বাকি তারকারা।
৩৮.৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২১২/২। কিন্তু পরের ২৩ রানে চার উইকেট খোয়ায় মাশরাফি বাহিনী। একে একে সাজঘরে ফিরে যান সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম ও তরুণ ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন। এতে ৪৩.৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৩৫/৬-এ।
সাকিব আল হাসান ১৭, মুশফিকুর রহীম ১২, মোসাদ্দেক হোসেন ৪, মোশাররফ হোসেন রুবেল ৪ ও মাশরাফি বিন মুর্তজা উইকেট দেন ব্যক্তিগত ২ রানে। তবে শেষ দিকে ব্যাটের জোর দেখান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ছয় নম্বরে ব্যাট হাতে ২২ বলে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। আর ইনিংস শেষে ২৭৯ রানের লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক তামিম ইকবালের। পরের বছর মার্চে প্রথম ওয়ানডেতে শতকের দেখা পান তামিম ইকবাল।
ওয়ানডেতে তামিমের ৭ সেঞ্চুরি
সাল প্রতিপক্ষ ভেন্যু রান বল ৪/৬
২২ মার্চ ২০০৮ আয়ারল্যান্ড ঢাকা ১২৯ ১৩৬ ১৫/১
১৬ আগস্ট ২০০৯ জিম্বাবুয়ে বুলাওয়ে ১৫৪ ১৩৮ ৭/৬
২৮ ফেব্রু. ২০১০ ইংল্যান্ড ঢাকা ১২৫ ১২০ ১৩/৩
২৩ মার্চ ২০১৩ শ্রীলঙ্কা হাম্বানটোটা ১১২ ১৩৬ ১০/১
১৭ এপ্রিল ২০১৫ পাকিস্তান ঢাকা ১৩২ ১৩৫ ১৫/৩
১৯ এপ্রিল ২০১৫ পাকিস্তান ঢাকা ১১৬* ১১৬ ১৭/১
১ অক্টোবর ২০১৬ আফগানিস্তান ঢাকা ১১৮ ১১৮ ১১/২