ঢাকায় প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের বসবাস। কিন্তু কনক্রিটের এ নগরীতে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো খোলা জায়গার বড় অভাব। নেই চাহিদামতো বিনোদন কেন্দ্র। জাতিসংঘের বরাত দিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন রিচার্স অ্যান্ড ট্রেনিং (নিপোর্ট) ২০১৩ সালের বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভের এক গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা ১১তম বৃহৎ মেগাসিটি। বর্তমানে জনসংখ্যা ১৭ মিলিয়ন (এক কোটি ৭০ লাখ)। পৃথিবীর অন্যান্য মেগাসিটিগুলোর মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। এখানে বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এই হিসাবে প্রতিবছর ঢাকা শহরে নতুন করে ৬ লাখ ১২ হাজার লোক যুক্ত হচ্ছে। প্রতি মাসে ৫১ হাজার আর প্রতিদিন প্রায় ১৭শ’ লোক এই শহরে স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছেন। গবেষণার বলা হয়, আগামী ২০৩০ সালে ঢাকার শহরের লোকসংখ্যা হবে ২৭ মিলিয়ন (২ কোটি ৭০ লাখ)। মানুষের দৈহিক ও মানবিক চাহিদার একটি অংশ হচ্ছে বিনোদন। কাজেই মানুষ ছুটি কিংবা অবসরে বিনদিত হতে ভিড় জমায় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে হারে বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। আর বেসরকারি পর্যায়ে রাজধানী বা রাজধানীর আশেপাশে কিছু বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠলেও তা মাধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের সাধ্যের বাইরে। সরকারের পলিসির অভাবে নতুন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠছে না বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা। নগর পরিকল্পনাবিদ সারোয়ার জাহান বলেন, প্রতিটি শহরে বিনোদন সেবা থাকতে হবে। শিশুদের খেলার জন্য মাঠ থাকতে হবে। কিন্তু এ বিষয়টাকে নজরে আনা হয়না।। শরীর, স্বাস্থ্য ভালো থাকার জন্য যে ধরনের পার্ক থাকা দরকার তা হচ্ছে না। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান বা রমনা পার্কের মতো আর একটি পার্ক তৈরী হয়নি এত বছরেও। অথচ রাজধানীর কত প্রসার ঘটেছে। আর বেসরকারি পর্যায়ে যেসব বিনোদন কেন্দ্র গড়ে গঠেছে তা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। এসব বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্র হচ্ছে যাদের অর্থ আছে তাদের জন্য। হাজার, হাজার টাকা খরচে করে এসব বাণিজ্যিক পার্কে যাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ জনগণের বিনোদন নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। বর্তমানে রাজধানীতে জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী কতগুলো বিনোদন পার্ক দরকার তার পরিকল্পনা করতে হবে। সে হিসাবে বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। সরকারি পর্যায়ে যে সকল বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণও সঠিকভাবে করা হয় না। মানুষকে এসব বিনোদন কেন্দ্রে বেড়াতে গিয়েও নানারকম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। সন্ধ্যার পরে রমনা পার্কে কেউ পরিবার নিয়ে বেড়াতে যেতে পারেন না নিরাপত্তার অভাবে। নগর ও পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকা শহর আয়তনে বেড়েছে ২৮ গুণ। কিন্তু সেই হিসাবে আমরা গণপরিসর তৈরী করতে পারিনি। মানুষ বিনোদিত হতে হাতিরঝিলে বেড়াতে যায়। কিন্তু হাতিরঝিলে কি আছে পানি ছাড়া। মানুষ ফ্লাইওভারের ওপরে ঘুরতে যায়। কারণ মানুষের যাওয়ার জন্য বিনোদন কেন্দ্রের অভাব। বর্তমানে মানুষের বিনোদনের জায়গা হচ্ছে রাস্তা। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম জিতলেও মানুষ রাস্তায় গিয়ে উল্লাস করে। আবার বিনোদন খুঁজতে রাস্তার ধারে গিয়ে বসে থাকে। এক সময় মানুষ সংসদ ভবনের ভিতরে ঢুকতে পারতো সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারেতো। কিন্তু এখন মানুষকে রাস্তা থেকেই সংসদ ভবন দেখতে হয়। আমরা মানুষের জন্য কাঠামোগত কোন গণপরিসর তৈরি করতে পারছি না বরং এ জায়গাগুলো আরো কমে আসছে। তাই আমরা দাবি জানিয়েছিলাম পুরাতন বিমানবন্দরটি সর্বসাধারণের জন্য একটি পার্ক হিসেবে তৈরী করার জন্য। যেহেতু এই বিমানবন্দরটি কোনো সামরিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না। সেটাও আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.