এ ঘর থেকে ওঘর করতে করতেই জীবনের ৫৩ বছর পার করে দিলেন মা সাহেরা খাতুন। জন্মের পর থেকে আমাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে করতেই হারিয়ে গেছে তাঁর নিজের সব শখ-ইচ্ছা, সাধ-আহ্লাদ। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। অল্প অল্প করে বড় করে তুলেছেন আমাকে। নিজে না খেয়ে খাইয়েছেন। সব সময় দিয়ে গেছেন, নিজে কখনো কিছু চাননি। ছোটবেলা থেকেই বেড়াতে আমার ভালো লাগে। আমার এই ছোট জীবনে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অনেক জায়গায় ঘুরেছি। প্রতিটি ভ্রমণ শেষে বাসায় এসে মাকে কাহিনি বলতাম। মা গভীর মনোযোগ দিয়ে সব শুনতেন। বিস্মিত হতেন। আমার মায়ের বড় একটা ব্যাপার, তিনি খুব কৌতূহলী। তিন বছর আগে একবার সিএফএসের (চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি) হয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে প্লেনে করে কক্সবাজারে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এসে যখন মাকে কী কী করলাম সেই কাহিনি বলছিলাম, তখন তিনি গভীর কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে। মূলত বিমানে ওঠার বিষয়টাই মাকে বেশ টেনেছিল। তাঁর চোখে মুখে ছিল অপার বিস্ময়। আমার প্লেনে ওঠার অভিজ্ঞতা শুনে তাঁরও খুব ইচ্ছা হলো তাতে চড়ার। মুখ ফসকে বলেও ফেলেছিলেন, ‘বাবা, আরে (আমাকে) একবার প্লেনে উঠাইস?’ ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মাথায় এল, আচ্ছা! আমি তো জীবনে অনেক ঘুরেছি, আর সামনেও ঘুরব। কিন্তু আমার মা তো চিড়িয়াখানা আর শিশুমেলা ছাড়া এই জীবনে আর কোথাও যাননি। মনটা খারাপ হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলাম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাকে নিয়ে বিমানে করে কক্সবাজারে যাব। মা-ছেলে দুজন মিলে সমুদ্রের পাড়ে বসে ভরা পূর্ণিমায় জ্যোৎস্নাবিলাস করব। সমুদ্রের এমাথা থেকে ওমাথা ঝিনুক কুড়াব আর ঘুরব। তারপর থেকেই শুরু হলো স্বপ্নের চারা বোনা। যেভাবে প্ল্যান করেছি, তাতে মাকে নিয়ে বিমানে করে কক্সবাজারে গিয়ে মারমেইড রিসোর্টে থাকাসহ বেশ ভালো পরিমাণ টাকা লাগবে। কিন্তু আমি তো সবেমাত্র কলেজ জীবন শেষ করেছি। টিউশনি ছাড়া কিছুই করি না। এত টাকা পাব কই?