মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে সকালেই হাজির মুমিনুল হক সৌরভ। তবে হাতে কোনো ব্যাট নেই, নেই খেলার ড্রেসও। কাছে যেতেই জানালেন কিছুটা চোটে আছেন। এনসিএলের প্রথম ম্যাচে খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলা হচ্ছে না তাই। যেহেতু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের বাকি ২০ দিন তাই নিজেকে ফিট করতে হবে। জাতীয় দলের এই তরুণ ক্রিকেটারকে বলা হয় টেস্ট স্পেশালিস্ট। ১৭ ম্যাচে ৫৬.০ গড়ে ১৪৫৬ রান। হাঁকিয়েছেন ৯ ফিফটি ও ৪ সেঞ্চুরি। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে পারফরমেন্সটা তেমন আহামরি নয়। তাই এই দুই ফরমেটে তার কেবলই আসা-যাওয়া। কিন্তু মুমিনুল বিশ্বাস করেন দল থেকে বাদ পড়ার কষ্ট নয়, টিকে থাকতে না পারার জিদটাই তাকে একদিন ওয়ানডেতে বড় ব্যাটসম্যান করে তুলবে। নিজের লক্ষ্য ও বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছেন মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে। শনিবারের সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো- প্রশ্ন: জাতীয় ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ না হওয়ায় কি বিপিএলের খেলায় আত্মবিশ্বাস কম হবে? মুমিনুল: জাতীয় দলে সুযোগ না হলেও আমিতো ঘরোয়া লীগে ওয়ানডে খেলি। আমি মনে করি সেটাই আমার বিপিএল খেলার জন্য আত্মবিশ্বাস যোগাবে। এবার আমি রাজশাহীতে খেলবো। আশা করি ভালো কিছুই করতে পারবো। প্রশ্ন: ওয়ানডে দলে সুযোগ না পাওয়াটা কি কষ্ট দেয়? মুমিনুল: ঠিক কষ্ট বললে ভুল হবে। আমি মনে করি এটি আমার ভাগ্যে ছিল না। হয়তো আল্লাহ যখন ভাগ্যে লিখে রেখেছেন তখনই সুযোগ আসবে। তবে একটা জিদ কাজ করে নিজের মাঝে। হয়তো এ জিদটাই আমাকে একদিন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বড় ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রমাণ করবে। আর এই জিদটা না থাকলে হয়তো ভালো খেলার মানসিকতাও তৈরি হবে না। টেস্টে খেলে যাচ্ছি। সেখানে যদি নিজের সেরাটা দিতে থাকি আশা করি একদিন না একদিন সুযোগ হবে। প্রশ্ন: ইংল্যান্ড দল ঢাকায়, তাদের বিপক্ষে টেস্টে আপনি খেলবেন সবকিছু ঠিক থাকলে। প্রতিপক্ষ নিয়ে কী ভাবছেন? মুমিনুল: ইংল্যান্ডের যেকোনো টেস্ট দলই হোক তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তাই অবশ্যই তারা শক্তিশালী দল। এখানে আমাদের নিজেদের যে সামর্থ্য আছে তার পুরাটাই মাঠে প্রয়োগ করতে হবে। আমি আমার নিজের বেলায়ও তাই করবো। আর একটা বিষয় হলো এটি আমাদের জন্য বেশ ভালো যে ওদের মতো বড় দলের বিপক্ষে খেলতে পারছি। প্রশ্ন: দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলেছেন গত বছর। এত লম্বা বিরতি মাঠে কতটা প্রভাব পড়বে? মুমিনুল: প্রভাবতো কিছুটা পড়বেই। কিন্তু এতে আমাদের কিছু করার নেই। আন্তুর্জাতিক সূচি যেভাবে হবে তাই আমাদের মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমরা বিসিএল খেলেছি এনসিএলও খেলেছি গত বছর, এ বছরও এনসিএল খেলছি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। অনুশীলনও হবে। আমি মনে করি একটু কঠিন হলেও নিজ দেশের মাটিতে মানিয়ে নেয়া সমস্যা হবে না। কারণ, এটি একটি মানসিক বিষয়। মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। প্রশ্ন: নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করছে? মুমিনুল: এনসিএল খেলছিলাম। একটা ম্যাচ হয়েছে। আর খেলার বাইরে রানিং, জিম ছাড়াও ব্যাটিং অনুশীলনটা বেশ ভালভাবেই করে যাচ্ছি। আশা করি আমার প্রস্তুতির ঘাটতি হবেনা। প্রশ্ন: এ বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাঠে শেষ টেস্ট খেলবেন। এরপর নিউজিল্যান্ড, ভারত ও শ্রীলঙ্কাতে। দেশের তুলনায় বিদেশের মাটিতে চ্যালেঞ্জটা কেমন? মুমিনুল: অবশ্যই দেশের তুলনায় বিদেশের মাটিতে ওয়ানডে, টেস্ট সবই চ্যালেঞ্জ। ভারত ও শ্রীলঙ্কাতে আমাদের মতো কন্ডিশন হলেও নিউজিল্যান্ডে খেলাটা আরও কঠিন হবে। তবে বিসিবি এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় কন্ডিশনিং ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউজিল্যান্ড যাওয়ার আগে। আমি মনে করি সেখানে অনুশীলনটা আমাদের অনেক ভাল উপকার করবে। কারণ অস্ট্রেরিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন ও উইকেট এর চরিত্র প্রায় একই। প্রশ্ন: বিদেশের মাটিতে টেস্ট খেলতে আপনি কতটা প্রস্তুত? মুমিনুল: আমি শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট খেলেছি। আমি একটা বিষয় মনে করি ক্রিকেটে যেমন উইকেট, কন্ডিশন একটা বড় বিষয় তেমনি মানসিক বিষয়ও। যার দ্রুত মানিয়ে নেয়ার মানসিক শক্তি আছে সে-ই সফল হবে। আমি সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করি। যে কোনো কন্ডিশনে নিজেকে মানিয়ে নিতে। প্রশ্ন: শুনলাম কিছুটা ইনজুরিতে আছেন? টেস্ট খেলতে পারবেন তো? মুমিনুল: হ্যাঁ, কিছুটা ইনজুরিতে আছি। ফিল্ডিংয়ের সময় নিচু হয়ে বল ধরতে গেলে পিঠে ব্যথা লাগে। তাই এনসিএলের দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলতে পারছি না। তবে চিকিৎসক ও ফিজিওরা বলেছেন, এক সপ্তাহ বিশ্রাম নিলে ও নিয়ম মেনে চললে আশা করি ঠিক হয়ে যাব। আর এই ব্যথাটা আমার ব্যাটিংয়ে কোন সমস্যা করছে না। প্রশ্ন: টেস্টে আপনি আসার পর তিন নাম্বার পজিশন নিয়ে দুঃচিন্তা কমেছে। কিন্তু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে এখনো এই পজিশনে তেমন কেউ নিজেকে প্রমাণ করতে পারছে না কেন? মুমিনুল: এই পজিশনটা আসলে একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ ওপেনাররা দ্রুত আউট হয়ে গেলে ধরে খেলতে হয় যেন উইকেটও না পড়ে রানও আসে। আবার দেখা যায় ওপেনাররা খুব ভাল করে গেলে দ্রুত রান করে রানের গতি ঠিক রাখতে হয়। এই চাপটা অনেকই সহজেই নিতে পারে না। আমি টেস্টে পেরে যাই। অমার জন্য সমস্যা হয় না। তবে আমি বিশ্বাস করি এখন আমরা যেভাবে খেলছি, তাতে হয়তো কিছু দিনের মধ্যে তৃতীয় পজিশনে খেলা দারুণ কোনো ব্যাটসম্যান পেয়ে যাব। প্রশ্ন: ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে পাওনা টাকা পেয়েছেন? মুমিনুল: না, এখনও সাড়ে ১৩ লাখ টাকা পাই। জানিনা কবে কি ভাবে পাব! প্রশ্ন: ক’দিন আগেই (২৯শে সেপ্টেম্বর) ২৫ পুরো করে ২৬-এ পা দিলেন। বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন? মুমিনুল: তিন বছর পর বিয়ে করবো। এখনো খেলা ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.