ইয়োশিকো সান ও ইউকিনো সানের সঙ্গে লেখক ও অন্যান্য
গিয়েছিলাম কাগোশিমা বিমানবন্দরে। প্রিয়মুখ ড. সাখাওয়াত ভাই ও ভাবিকে বিদায় জানাতে। পিএইচডি গবেষণা শেষে দেশে ফিরছেন। তাঁরা বোর্ডিংয়ের লাইনে দাঁড়িয়েছেন আর আমরা পাশে গল্প করছি। এমন সময় কেউ একজন বলে উঠলেন, স্লামালাইকুম।
সবাই ফিরে তাকালাম। দেখি এক জাপানিজ দম্পতি। আপনারা কি কাগোশিমায় থাকেন? মুহূর্তের জন্য সবাই হতবাক হয়ে গেলাম। নিজের চিরচেনা ভাষাটিকেই কেমন যেন ভীষণ অচেনা লাগল। কিছুটা সুস্থির হয়ে ইকবাল ভাই জবাব দিলেন, হ্যাঁ। তাঁরা বললেন, আমরা অনেকক্ষণ থেকেই আপনাদের দেখছি, বাংলায় কথা বলছেন। তাই এগিয়ে এলাম। তা আপনারা কি করেন? প্রথমে ভেবেছিলাম তাঁরা হয়তো একটু বাংলা জানেন। কিন্তু একি, তাঁরা রীতিমতো বাংলায় আলোচনা শুরু করলেন। আমাদের হতবাক হওয়ার মাত্রা এবার চরমে। জিজ্ঞেস করলাম, বাংলা কোথায় শিখেছেন? বললেন, বাংলাদেশে। কেন শিখেছেন বাংলা? জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা জানালেন, বাংলা তাঁদের ভীষণ ভালো লাগে। তাই ধানমন্ডি অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে তাঁরা বাংলা শেখেন। অনেক দিন থেকেই শিখছেন। ঢাকায় ১ জুলাইয়ের সন্ত্রাসী হামলার পর ফিরে এসেছিলেন। এখন আবার যাচ্ছেন। থাকবেন ফার্মগেটে।
তাঁরা বাংলাদেশের অনেক এলাকা ঘুরে বেরিয়েছেন। আমাদের দেশের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলেন। সবাই বললাম। তাঁরা প্রতিটি জেলা শহরের নাম চিনলেন। জানালেন বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার কথা। বললেন বাংলা ভাষার মাধুর্যের কথা। তাঁদের কাছে জানতে চাইলাম, ভয় করছে না? বললেন, মোটেও নয়, কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হয়তো হতে হবে, তবে সেগুলো তো মেনে নিতেই হবে। আবার জানতে চাইলাম, শুধু কি বাংলা শিখতেই যাচ্ছেন? বললেন, হ্যাঁ, শুধু বাংলা শিখতেই যাচ্ছি। বাংলা আমাদের খুবই ভালো লাগে। তাঁদের কথা শুনে নিজের ভাষার জন্য আরেকবার গর্বে বুকটা ফুলে উঠল। এমন সময় বোর্ডিংয়ের জন্য শেষবারের জন্য ডাক এল। তাঁরা বললেন, এবার যেতে হবে। তবে ফিরে এসে আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। আমরাও বললাম, নিশ্চয়, আমরা আপনাদের জন্য অপেক্ষা করব। ভদ্রলোকের নাম ইয়োশিকো সান আর স্ত্রীর নাম ইউকিনো সান।
ড. সাখাওয়াত ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে লেখক ও অন্যান্য
বিদায় ইয়োশিকো, বিদায় ইউকিনো বলে তাঁদের বিদায় জানালাম। আর মনে মনে বললাম, জাপান-বাংলাদেশের মধ্যে যে নিবিড় ভালোবাসার বন্ধন রয়েছে, আপনারাই তার উৎকৃষ্ট নমুনা। কোনো উগ্রবাদী গোষ্ঠী সেটাতে ফাটল ধরাতে পারবে না। ভালো থাকুক ইয়োশিকো-ইউকিনো সান, ভালো থাকুক জাপান-বাংলাদেশ বন্ধন।
(লেখক পিএইচডি গবেষক, কাগোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান)
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.