দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ দশমিক ২ শতাংশ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কোনো না কোনোভাবে তারা স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, যৌন ও অর্থনৈতিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১১ সালে এ হার ছিল ৮৭ দশমিক ১ শতাংশ। এ হিসাবে চার বছরে বিবাহিত নারীদের ওপর নির্যাতন কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘ভায়োল্যান্স এগেইনেস্ট উইমেন-২০১৫’ শীর্ষক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিবিএস এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিবিএসের মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াজেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বক্তব্য রাখেন ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা প্রিসিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুন, পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
জরিপে বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৫ এ চার বছরে বিবাহিত নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন কমলেও শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে। ২০১৫ সালে ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ বিবাহিত নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। এই সময়ে যে কোনো কারণে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ নারী। ২০১১ সালে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের এই হার ছিল যথাক্রমে প্রায় ৪৮ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ।
জরিপে বলা হয়, স্বামী ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি দ্বারা কোনো না কোনো সময় শারীরিক নির্যাতন হয়েছে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ নারীর। এ ছাড়া স্বামী ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ দশমিক ৯ শতাংশ নারী। একই সঙ্গে দশ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
জরিপে দেখা গেছে, উপার্জনের টাকা স্বাধীনভাবে খরচ করতে পারেন এমন নারীর সংখ্যা ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, নির্যাতনের পরে আইনি সহায়তা নিয়েছিলেন ২ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। নির্যাতনের কথা কাউকে জানাননি ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী ১৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী বিবাহিত মহিলারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গ্রামের ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ বিবাহিত নারী জীবনের কোনো না কোনোভাবে স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে এই হার ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ। শহরে নির্যাতনের হার ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক নির্যাতনের ক্ষেত্রেও জাতীয় ও গ্রামীণ স্তরের চিত্র প্রায় অভিন্ন। গ্রামের ১২ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শহুরে বিবাহিত নারীদের মধ্যে এই হার ১০ দশমিক ২ শতাংশ। জাতীয়ভাবে এই হার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।
এ ছাড়া স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনোভাবে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন গ্রামে ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও শহরে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ নারী। জাতীয় পর্যায়ে এর হার ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বে সব দেশেই নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তবে বাংলাদেশে তুলনামূলক কম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, ভারতে প্রতি তিন দিনে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সে তুলনায়ও আমাদের অবস্থান ভালো আছে।
মন্ত্রী বলেন, নারী নির্যাতন একবারে বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকার নারী নির্যাতনের হার কমিয়ে আনতে কাজ করছে। মন্ত্রী আরও বলেন, নারী নির্যাতনের জরিপ করার পাশাপাশি পুরুষ নির্যাতনের জরিপ করাও প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার কাজ করছে। আগের তুলনায় অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। নির্যাতন কমাতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার পরও সরকার কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে। নারী নির্যাতনের পাশাপাশি শিশু ও কিশোরও বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করারও আহ্বান জানান তিনি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.