সকাল সাড়ে নয়টা, মিরপুর ২ নম্বর সড়কের প্রশিকার মোড় থেকেই যান চলাচল বন্ধ। অন্যদিকে সড়কের পূর্ণিমার মোড় থেকে স্টেডিয়ামমুখী রাস্তাও বন্ধ। স্টেডিয়ামের মূল ফটকের আশপাশের সব গলির মুখ কাটাতার দিয়ে আটকে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাধারণত এমন নিরাপত্তার দেখা মেলে ম্যাচের দিন। কিন্তু ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অনুশীলনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে বোঝার বাকি থাকলো না যে, এ নিয়ে কতটা সজাগ বাংলাদেশ। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর শঙ্কা দেখা দিয়েছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে। ইংল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফরের আগে সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল এই নিরাপত্তা। শঙ্কা ছিল হয়তো তারাও অস্ট্রেলিয়ার মতো বাংলাদেশ সফর স্থগিত করবে। কিন্তু গত ১৭ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসে ইংল্যান্ডের নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল। তারা ফিরে গিয়ে সবুজ সঙ্কেত দিলে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী গত শুক্রবার রাতেই ঢাকায় পৌঁছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। শনিবার সারা দিন হোটেলেই কাটিয়েছেন ইংলিশ ক্রিকেটাররা। এরপর গতকাল সকাল ১০টায় তারা মাঠে আসেন। বিকালে মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে প্রথম অনুশীলনে নামেন তারা। একাডেমির মাঠে অনুশীলনের পুরোটা সময় কাটান ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলনে। অধিনায়ক জস বাটলার থেকে শুরু করে তরুণ বেন ডাকেট সবাই এখন ক্রিকেট নিয়েই ভাবছেন তা অনুশীলনে মনোযোগ দেখেও বোঝা যায়। আগের দিন বাটলার বলেছেন, ‘আমাদের এখন নিরাপত্তা নয় ভাবনাতে ক্রিকেট। সেদিকেই মন দিতে চাই।’ তবে তাদের মনোযোগ ক্রিকেটে থাকলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবির সব মনোযোগ এখন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়েই। এরই মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালে মাঠে এক দর্শক ঢুকে যে কাণ্ড ঘটিয়েছে তাতে বিসিবির নিরাপত্তার ফাঁক-ফোকর বের হয়ে গেছে। যে কারণে এখন এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বিসিবির প্রথম লক্ষ্য ও চ্যালেঞ্জ। শুধু যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা, তা নয়। ইংল্যান্ডে দলের সঙ্গে আসা দর্শক সংবাদকর্মীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হচ্ছে বিসিবির। একটি সূত্রে জানা যায়, মোট ৩৬ দিন ইংল্যান্ড দল বাংলাদেশে অবস্থান করবে। এর মধ্যে দলের সঙ্গে আসা ক্রিকেটার ছাড়াও ৮ কোচ, ইসিবি পরিচালক, সংবাদকর্মীসহ মোট ৪৫ জনকে নিরাপত্তা দিতে হবে। গতকাল সকালে মাঠে প্রবেশ করার পর থেকেই ইংলিশ ক্রিকেট দলের অনুশীলনস্থল একাডেমি ভবনের চারপাশ ঘিরে রাখে পুলিশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। মাঠে ও বাইরে ছিল পর্যাপ্ত সাদা পোশাকের নিরাপত্তাকর্মী। সেই সঙ্গে ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ছাড়া অনুশীলনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি কাউকে। কঠিন নিরাপত্তা বলয়ে মাঠের একপাশে যখন ব্যাটসম্যানরা ঘাম ঝরাচ্ছিলেন অন্য পাশে তখন ব্যস্ত বোলাররা। দুই স্পিনার মঈন আলী ও আদিল রশিদকে একটু বেশিই ব্যস্ত দেখা গেল। কারণ বাংলাদেশের মাাটিতে স্পিনারাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে মাঠে গড়াবে ৭ই অক্টোবর। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ আগেই তাদের চলে আসার অন্যতম কারণ কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেয়া। আজ ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে ইংলিশরা। ১৬ জনের ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন টেস্ট অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকও। আগের রাতে ঢাকায় পৌঁছেন তিনি। ইংল্যান্ড দল বাংলাদেশে পৌঁছার আগেই দু’জন নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক চলে এসেছেন বাংলাদেশে। তারা শুরু থেকেই মিরপুর স্টেডিয়ামসহ সর্বত্র নজর রাখছেন। গতকালও তারা মাঠে আসেন। প্রতিনিয়ত তারা খোঁজ নিচ্ছেন নিরাপত্তা ব্যবস্থার।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.