আজ ৫ই অক্টোবর বুধবার। ক্রিকেট তারকা নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফির জন্মদিন। নির্ধারিত ওভারে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সেরা অধিনায়ক, ১৬ কোটি মানুষের আস্থার প্রতীক ও ক্রিকেটের রূপকথার নায়ক ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত মাশরাফি বিন মর্তুজার ৩৩তম জন্মদিন পালনে নড়াইলে নানা আয়োজন করা হয়েছে। । নড়াইলে কৌশিক হিসেবে পরিচিত এ মানুষটি ১৯৮৩ সালের এই দিনে নড়াইল শহরে তার নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পাশাপাশি ২০১৪ সালের আজকের এই দিনে জন্ম নেন মাশরাফি ও সুমি দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান সাহেল মর্তুজা। সেই অর্থে আজ বাপ-বেটার জন্মদিন।
মাশরাফি মাত্র ২৮টি ওয়ানডে ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাতেই সফল অধিনায়কের তালিকায় তার নাম এসে পড়েছে। ‘জয়-হারের’ শতাংশ হিসেবে ৭১.৪২ ভাগ সাফল্য ‘নড়াইল এক্সপ্রেসে’র। যেখানে মাশরাফি চার নম্বর স্থানটি দখল করে নিয়েছেন। ২৮ ম্যাচের ২০টিতেই জিতেছেন। ৮টিতে হেরেছেন। নির্ধারিত ওভারে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি। তার নেতৃত্বে টাইগাররা শুধু আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি, সেই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে শক্তিশালী দল পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, সর্বশেষ আফগানিস্তানকেও হারিয়েছে। এশিয়া কাপ টি-২০’র ফাইনালেও খেলেছে বাংলাদেশ।
অসংখ্য জয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখা মাশরাফির ২০০১ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয়। মাশরাফির বাবার নাম গোলাম মর্তুজা স্বপন। আর মায়ের নাম হামিদা মর্তুজা। নড়াইলে জন্ম নেয়া মাশরাফির ছেলেবেলা কেটেছে চিত্রা নদীর তীরে চঞ্চলতা আর দস্যিপনা করে। ছেলেবেলায় অবশ্য তার প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ধরাবাঁধা পুঁথিগত পড়াশোনার পরিবর্তে ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন। আর মাঝে মধ্যে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটতেন। তারুণ্যের শুরুতে ক্রিকেটের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে, বিশেষত ব্যাটিংয়ে। যদিও পরবর্তীতে বোলার হিসেবেই তিনি বেশি খ্যাতি অর্জন করেছেন। মোটরবাইকপ্রিয় কৌশিককে সবাই খুব হাসিখুশি আর উদারচেতা মানুষ হিসেবেই জানেন। তিনি নড়াইলে ভীষণ জনপ্রিয় ও ভালো মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত। এখানে তাকে ‘প্রিন্স অব হার্টস’ বলা হয়। এ শহরেরই সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশোনাকালীন সুমনা হক সুমির সঙ্গে তার পরিচয়। এরপর দুজনে ২০০৬ সালে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। তাদের ঘরে এক মেয়ে ও এক ছেলে আলো ছড়িয়েছে। বড় মেয়ে হুমায়রা। আর ছোট ছেলের নাম সাহেল মর্তুজা। নব্বইয়ের দশকে নড়াইলের ক্রিকেটার-সংগঠক শরীফ মোহাম্মদ হোসেন উঠতি তরুণদের যত্ন নিতেন। তিনি মাত্র ১১ বছর বয়সে মাশরাফিকে তার ক্লাব নড়াইল ক্রিকেট ক্লাবে খেলার সুযোগ করে দেন। এ সময় থেকেই মাশরাফির গতি দৃষ্টিগ্রাহ্য হতে শুরু করে। ১৯৯১-এর দিকে মাগুরায় বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পে বিকেএসপি কোচ বাপ্পির সান্নিধ্যে এসে বোলিংয়ের অনেক মৌলিক বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হন। পরের বছর জাতীয় কোচ ওসমান খান নড়াইলে এক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালাচ্ছিলেন। ওই সময় মাশরাফির আমন্ত্রণ আসে খুলনায় খেলার জন্য। খুলনায় তার গতি ও সুইং হইচই ফেলে দেয়। সেই সূত্রে খুলনা বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দলে সুযোগ এবং ঢাকায় আসা। পরবর্তীতে সুযোগ পান জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। সে সময় ক্যারিবীয় বোলিং কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের পরিচর্যায় পাল্টে যান মাশরাফি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকতে মাশরাফি দারুণ পারফরম্যান্সের কারণে জিম্বাবুয়ে দলের বিরুদ্ধে ‘এ’ দলের খেলায় তিনি সুযোগ পান। এ নিয়ে সমালোচনা হয়। কারণ, মাশরাফি ঢাকার কোনো সিনিয়র ডিভিশন লীগেও খেলেননি। তবে সমালোচকদের মোক্ষম জবাব বেলিংয়ের মাধ্যমে দিয়েছিলেন মাশরাফি। সেই সিরিজে মাশরাফি এক ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছিলেন। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে তার নাম হয়ে যায় ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। এরপর আর ইনজুরি ছাড়া আর কেউ মাশরাফি বিন মর্তুজাকে আটকাতে পারেননি। ১৬০ ওডিআই খেলা মাশরাফির ঝুলিতে রয়েছে ২০০-এর অধিক উইকেট। সেরা বোলিং ২৬ রানে ৬ উইকেট। এছাড়া ৩৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৭৮ উইকেট। আর ৩১টি-২০ ম্যাচে নিয়েছেন ২৬ উইকেট। শুরুতে শুধু বোলার হিসেবে জনপ্রিয়তা পেলেও পরবর্তীতে অলরাউন্ডার হিসেবে সুনাম কুড়ান। ৩৬ টেস্ট ম্যাচে তিন ফিফটিসহ ৭৯৭ রান করেন তিনি। ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে ইনজুরিতে পড়েন ১১ বার। এই ইনজুরির কারণেই ঘরের মাঠে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে খেলা হয়নি তার। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে তোলেন দলকে। ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত হারে বিদায় নেন।
নড়াইলে আজকের কর্মসূচি
নড়াইলের গর্ব এই প্রিয় ক্রিকেটারের জন্মদিন উপলক্ষে আজ নড়াইল পাবলিক লাইব্রেরিতে মাশরাফি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কেক কাটা, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।