বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে ছোট্ট একটি লাইন ধরে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। জানা গেলো এখান থেকেই তারা টিকিট সংগ্রহ করবেন। তবে টিকিটের কাউন্টার খোলার জন্য অপেক্ষা করতে হবে পর দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত। ধীরে ধীরে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা। লাইনের দৈর্ঘ্যও বাড়তে শুরু করছে। রাত ১১টায় দেখা গেলো পেপার বিছিয়ে আর পলিথিন বিছিয়ে বসে গেছে দুই থেকে তিনশ’ লোক। যত রাত বেড়েছে ততোই বেড়েছে টিকিট প্রত্যাশী দর্শকের সংখ্যা। লাইনে দাঁড়ানো এলাকার স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে ঝামেলাও লেগে ছিল সারাক্ষণ। ভোর ৬টা থেকে বৃষ্টি শুরু। কিন্তু এই বৃষ্টিও দমাতে পারেনি দর্শকদের। মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন থেকে সেই লাইন সকাল ৯টায় দেখা গেলো সাড়ে এগারো নম্বর পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। একপর্যায়ে ধৈর্য্য হারা দর্শকদের মধ্যে ঝগড়া বাড়তে শুরু করলো। অবশেষে দর্শকদের টিকিট পাওয়ার জন্য উন্মাদনা ঠেকাতে পুলিশ শুরু করে লাঠিচার্জ। তাতেও কাজ না হলে অবশেষে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এতে অবশ্য কিছুটা উত্তেজনা কমে আসে। তবে সারারাত না ঘুমিয়ে সকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের মারের কাছে হার মেনে অনেক দর্শকই ফিরে গেলেন শূন্য হাতে। এমনই একজন আবু হেনা। টিকিট নিতে এসেছিলেন কামরাঙ্গীর চর থেকে। তিনি বলেন, ‘ভাই সারা রাত অপেক্ষা করলাম। সকালে বৃষ্টিতে ভিজেছি। সেই জামা কাপড় গায়ে শুকিয়েছে। এখন পুলিশের মার। টিকিট পেলাম না। এরচেয়ে আর কষ্ট কী হতে পারে।’ রাতভর অপেক্ষাতে দর্শকদের পোহাতে হয়েছে নানা বিড়ম্বনা। মিরপুর ১২ নম্বর সেকশন থেকে আসা পাঁচ কিশোর লাইন ধরেছিলেন রাত ১০টায়। কিন্তু রাত ১টা বাজতেই এলাকার কিছু তরুণ এসে তাদের উঠিয়ে দেয়। সেই জায়গাটিও তারা দখল করে নেয়। তবুও হাল ছাড়েনি তারা। তাদেরই একজন সবুজ বলেন, ‘ভাই আমরা বসে বসে লুডু খেলছিলাম কারণ সারারাত অপেক্ষা করতে হবে রাস্তাতে। কিন্তু রাত ১টার দিকে এলাকার কিছু বড় ভাই এসে আমাদের উঠিয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে আমরা অনেকটা দূরে গিয়ে অপেক্ষা করি। এখনও এত কষ্টের পর টিকিট পাবো কিনা জানি না।’ এছাড়াও আরো ভয়ঙ্কর অভিযোগ আসে। জানা গেলো, টিকিটের লাইনের শুরুতে ইনডোর স্টেডিয়ামের পার্শ্ববর্তী এলাকার কিছু তরুণ ও যুবক লাইন ধরেছিল। পরে সকালে তারা জায়গাগুলো দর্শকদের কাছে বিক্রি করে দেয়। লাইনে জায়গা কিনে নেয়া জয়নাল ও সাত্তার জানালেন কষ্টের কথা। তারা বলেন, ‘আমরা লাইন ধরেছিলাম। কিন্তু রাতে এই রাস্তাতে থাকতে পারবো না বলে চলে যাই। সকালে এসে দেখি লাইন এত লম্বা যে টিকিট পাবো না। তাই কয়েকজন ছিল লাইনের সামনে তাদের কাছ থেকে ৫০০ টাকাতে লাইন কিনে নেই।’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম বিসিবির টিকিট বিক্রির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল অন লাইন প্রতিষ্ঠান ‘সহজ ডটকম’। প্রথমবার তেমন কোনো অভিযোগ না পাওয়া গেলেও এবার জানা যায় প্রথম ম্যাচের টিকিট মাত্র ১ দিনেই শেষ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সহজডটকমের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে বিসিবির কাছ থেকে আমরা যে পরিমাণ টিকিট পাই তা দিয়ে কোনো ভাবেই এত দর্শকের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। জানা যায়. সহজ ডটকম ৬ থেকে ৭ হাজারের বেশি টিকিট পায় না, যা অনলাইনে মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায়। আর সরাসরি ম্যাচের দিন সকালে কাউন্টার থেকে কেনার যে ব্যবস্থা তাতে বিড়ম্বনা চরমে। যে কারণে দর্শকরা শেষ পর্যন্ত টিকিট নিয়ে মাঠে আসলে তাদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। আর বেশির ভাগই টিকিট না পেয়ে ফিরে যান অথবা ব্ল্যাকে টিকিট পাওয়ার সন্ধান করেন। এতে লাভবান হয় ব্ল্যাকারই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.