ঢাকার দোহার উপজেলার লটাখোলার কাদেরিয়া পাক দরবার শরীফেই মাত্র সাড়ে সাত শ’ টাকা খরচ করে পবিত্র হজ সম্পন্ন করানোর নামে ভণ্ডামি করা ভণ্ডপীর ডা. মতিউর রহমান মতি ওরফে হজবাবার আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তা সিলগালা করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পালিয়েছে ভণ্ডপীর ডা. মতিউর রহমান ওরফে মতি ডাক্তার। গত শনিবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দোহার থানার ওসি সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আস্তানাটি সিলগালা করে দেয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা সেখানে ভাঙচুর চালায়। এছাড়া, গতকাল দুপুরে ভণ্ডপীরের শিষ্য শফিকুল ইসলাম সেন্টুর মাজারেও আগুন দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দোহার থানা পুলিশ। ঘটনাগুলোতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলা জুড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিজেকে নবী দাবি করে কয়েক বছর পূর্বেও হয়েছেন বিতর্কিত, সমালোচিত। দোহার উপজেলার লটাখোলায় তার আস্তানা থেকেও তাকে মারধর করে নিজের আস্তানায় একটি মক্কা শরীফ বা কাবাঘরের ন্যায় প্রতীক রেখে সেটি কেন্দ্র করে হজ পালনসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন এই হারবাল চিকিৎসক মতি ডাক্তার। আস্তানায় হতো বাৎসরিক ওরস। ওরসে উপার্জন হতো লাখ লাখ টাকা। পাওয়া যেত ভক্তবৃন্দের দেয়া মানতের (ইচ্ছাকৃত) নানা উপঢৌকন। ভক্তদের সেজদা আর রোগী দেখার নামে তাদের মুরিদ বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ ইসলাম ধর্মবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এই মতি ডাক্তার। লাখ লাখ টাকা খরচ করে আর হজ পালন করতে মক্কায় যেতে হবে না, এখন দোহার উপজেলার লটাখোলার কাদেরিয়া পাক দরবার শরীফে বসেই করে নিতে পারেন পবিত্র হজ। এমন মিথ্যা প্রচারণা আর ভণ্ডামি করে সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন প্রতারিত করেছেন কাদেরিয়া পাক দরবার শরীফের কথিত পীর হজবাবা খ্যাত ডা. মতিউর রহমান ওরফে মতি ডাক্তার ওরফে পীর মতি। এই ভণ্ডপীরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে ইতিপূর্বেও এলাকায় ব্যপক সমালোচনা হয়। তবে তার গঠিত মুরিদ বাহিনীর ছত্রছায়ায় থেকে এতোদিন রক্ষা পেয়েছেন এই ভণ্ডপীর। এর আগে তার ভণ্ডামির কারণে তার পৈতৃক বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলার গালিমপুর এলাকা থেকেও তাকে বিতাড়িত করা হয়। তবে এই ভণ্ডপীরের ভণ্ডামি নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে খবর প্রচারের পরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান পরিচালনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না কথিত পীর মতি। পরে এই ভণ্ডপীরের প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন বই, সিডি ও ছবি জব্দ করে পুলিশ। সেসময় এলাকাবাসী কথিত এই পীরের মাজারে ভাঙচুর চালায়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর এখানে করতে দেয়া হবে না- এই মর্মে পুলিশ এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে এলাকাবাসী এই ভণ্ডপীরকে গ্রেপ্তার ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। শেষে ভণ্ডপীরের আস্তানাটি সিলগালা করে দেয় প্রশাসন। তবে এখনো তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আল-আমিন বলেন, ‘এ ধরনের ভণ্ডামি জঘন্যতম অপরাধ। কথিত ওই পীরের আস্তানা আমরা সিলগালা করে দিয়েছি। এ ঘটনা নিয়ে যেন কোনো মহল বিশেষ ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখবে প্রশাসন। দোহার থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ভণ্ডপীরের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র জব্দ করেছি। তবে এ ঘটনার জেরে ভবিষ্যতে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম না নেয় আমরা সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছি।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.