মরক্কো ও হাঙ্গেরি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। প্রধানমন্ত্রী মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন এবং রসিকতা করে বলেছেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদকাল যেহেতু ৩ বছর পেরিয়ে গেছে, অর্থাৎ মধ্য স্তর পার হয়ে গেছে, সুতরাং এখন আর মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রশ্ন আসে না। বস্তুত মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিটি সমাজে এত সোচ্চার নয়। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো এবং সুশীলসমাজের একটি অংশ আগামী নির্বাচন কোন্ পদ্ধতিতে হবে এবং সেই নির্বাচন পরিচালনা করবে যে কমিশন তা কতটা নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী হবে, সেদিকেই বেশি নজর দিচ্ছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন, তা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন মাথাব্যথা না ওঠারই কথা। তবে প্রধানমন্ত্রী ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রশ্নে বলেছেন, কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিই পদক্ষেপ নেবেন। তার এই বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক দলগুলো স্বাভাবিকভাবে নিতে চাইবে না। সংবিধানে নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রশ্নে এখন পর্যন্ত কোনো আইন তৈরি হয়নি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা উচিত বলে মনে করি আমরা। রাষ্ট্রপতি পদক্ষেপ নিতে পারেন বৈকি; কিন্তু সেই পদক্ষেপে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের প্রতিফলন থাকলে পুরো বিষয়টি নিয়ে আর বিতর্কের অবতারণা হবে না। সংসদের বাইরের বৃহত্তম দল বিএনপি ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন গঠনের একটি রূপরেখা দিয়েছে। এই রূপরেখা নিয়ে সুশীলসমাজে আলোচনাও হচ্ছে। বিএনপি কর্তৃক উত্থাপিত রূপরেখা হুবহু অনুসরণ করতে হবে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। তবে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে যদি সেই রূপরেখার কোনো অংশ কাজে আসে, তাহলে তা গ্রহণ করতে আপত্তি থাকার কথা নয়। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের এমন এক নির্বাচন কমিশন দরকার, যা অবিতর্কিতভাবে আগামী ৫ বছর জাতীয় সংসদসহ অন্যান্য নির্বাচন পরিচালনা করার যোগ্যতা রাখে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারই গঠিত হোক না কেন, তা দেশে-বাইরে গ্রহণযোগ্য এবং স্থিতিশীল হবে। ফলে রাজনৈতিক সংকটও কমে আসবে অনেকটাই।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সুশীলসমাজ যেসব চিন্তার প্রকাশ ঘটাচ্ছে, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব তিনি সেগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করবেন। সব পক্ষের সব মতামতের আলোকে যদি ন্যূনতম একটা ঐক্য তৈরি করা যায়, তাহলে তা সবার জন্যই মঙ্গল। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে ভাবতে হবে, পুনর্বার ক্ষমতায় যাওয়ার যে চেষ্টাটা তারা করছেন, সেটা করা উচিত একটি অবিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের দ্বারা পরিচালিত নির্বাচনের মাধ্যমেই। শুধু গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন চর্চার জন্যই নয়, সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থেই একটি গ্রহযোগ্য নির্বাচন কমিশন দরকার আমাদের।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.