মায়ের হাতে দুই শিশু হত্যা
রাজধানীর বাসাবোতে মায়ের হাতে জোড়া শিশু হত্যার পর পেরিয়ে গেছে এক মাস ২৩ দিন। হত্যাকারী মা ধরা পড়েছেন সেদিন ভোরেই। স্বীকারোক্তিও দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, নিজ হাতেই চাপাতি দিয়ে নিজের দুই শিশুকে হত্যা করেছেন। ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিতেও একই কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু মামলার তদন্ত কাজ তেমন এগোয়নি আজও। বাদীর পক্ষ থেকেও মামলার খোঁজখবর নেয়া হয় না। দীর্ঘ এই সময়েও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং ফরেনসিক রিপোর্ট এসে পৌঁছেনি সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার হাতে। রিপোর্ট পেলেই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। গত ১২ই আগস্ট রাতে উত্তর বাসাবোর ১৫৭/২ বাসা থেকে পুলিশ মাশরাফি বিন মাহবুব আবরার (৭) এবং হুমায়রা বিনতে মাহবুব তাকিয়ার (৫) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় দুই শিশুর বাবা মাহবুব রহমান স্ত্রী তানজিনা রহমানকে আসামি করে সবুজবাগ থানায় মামলা করেন। ঘটনার দিন ভোর রাতে পুলিশ তানজিনা রহমানকে গ্রেপ্তার করে। আসামি বর্তমানে কারাবন্দি রয়েছেন। সূত্র জানায়, শিশুদের পিতা ওইদিন এশার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। বাসায় ফিরে দেখেন, দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। পরে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে বিছানার ওপর একজনের এবং পাশের কক্ষে অন্য সন্তানের লাশ দেখতে পান। ওই সময় স্ত্রী তানজিনা রহমান ঘরে ছিলেন না। পরে পুলিশ গিয়ে নিহত দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে। ওই সময় বাসা থেকে একটি চাপাতিও উদ্ধার করে পুলিশ। তারা মাদরাসায় পড়াশোনা করতো। শিশু দুটির লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও একই কথা উল্লেখ করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই শিশুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এতে বলা হয়েছে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতেই ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয়। যেভাবে তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, তাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়েছিল। এদিকে গ্রেপ্তারের পর ৫ দিন রিমান্ডের ৪ দিনের মাথায় ঘাতক মা তানজিন রহমান আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিল। জবানবন্দিতে তানজিনা বলেছিলেন, স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল। কিন্তু কে যেন প্রায়ই তার কানে কানে বলতো, ‘তুই তোর দুই সন্তানকে মেরে ফেল। তা না হলে তোর ভালো হবে না। এ কারণেই আমি আমার দুই সন্তানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করি। হত্যার পর বুঝতে পারি কাজটি ভালো করিনি। এ অবস্থায় ঘটনার পর বাসা থেকে পালিয়ে যাই। পরে পুলিশ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই মাস হতে চললেও আজ পর্যন্ত মামলার তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মুস্তাজিরুর রহমান জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। এখনো ফরেনসিক রিপোর্ট এবং ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে এসে পৌঁছেনি। এগুলো হাতে পেলেই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। মামলার বাদী এ ব্যাপারে যোগাযোগ রাখেন কি না জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তিনি কখনো যোগাযোগ করেন না। এমনকি তিনি যে বাসা পরিবর্তন করেছেন, মালামাল নিয়ে গেছেন সে ব্যাপারেও কখনো অবহিত করেনি। আমরাই মামলার ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে জানতে পারি তিনি বাসা পরিবর্তন করেছেন। এছাড়া সরাসরি বাদীর সঙ্গে যোগাযোগেরও কোনো উপায় নেই। বাদী মাঝে মাঝে অফিসের টিএনটি নাম্বার থেকে ফোন করলেও তার মোবাইল নম্বরটি তাদের কাছে নেই। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যপক জানান, কত দিনের মধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে সে ব্যাপারে কোনো নিয়ম নেই। সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি প্রতিবেদন দেয়া হয়। নিহত মাশরাফি বিন মাহবুব আবরার (৭) এবং হুমায়রা বিনতে মাহবুব তাকিয়ার (৫) ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই সময়ই আমরা বলে দিয়েছি তাদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাছাড়া তাদের ঘাতক মা-ও এই হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখনো পাঠানো হয়নি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.