গতকাল বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বহনকারী বিশেষ বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে স্বাগত জানান। উল্লেখ্য, গত তিন দশকের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো চীনের কোনো প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এলেন। অবশ্য শি জিনপিংয়ের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর নয়। এর আগে প্রায় ছ’বছর আগে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্থানীয় একটি হোটেলে ওঠেন। এরপর বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান পূর্বনির্ধারিত আনুষ্ঠানিক আলোচনায় যোগ দিতে। বৈঠকের পর দুই নেতা একান্ত আলোচনায় মিলিত হন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আলাদা আলাদাভাবে হোটেলে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে দেখা করেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এরপর তিনি তার সম্মানে দেয়া রাষ্ট্রপতির নৈশভোজে যোগ দেন।
দু’দিনের রাষ্ট্রীয় এ সফরে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উন্নয়ন কৌশল ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার বিষয় ছাড়াও অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগ, সন্ত্রাসবাদ দমন, সামুদ্রিক অর্থনীতি ও তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত জানা গেছে, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ১২টি ঋণচুক্তি ও সমঝোতা স্মারকসহ মোট ২৭টি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বস্তুত চীন ও বাংলাদেশের জনগণ সুপ্রাচীনকাল থেকেই পরস্পরের ভালো প্রতিবেশী ও বন্ধু। সবচেয়ে বড় কথা, চীন ও বাংলাদেশ উভয় দেশের জনগণই জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াইয়ের পাশাপাশি উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং সফল হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, চীন-বাংলাদেশ মৈত্রীর ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তৎকালীন চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই দু’বার ঢাকা সফর করেন। সে সময় বঙ্গবন্ধুও দু’বার চীন সফর করেন। মূলত চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার অনেক আগে দু’দেশের প্রবীণ নেতারা ‘মৈত্রী বৃক্ষে’র চারা রোপণ করেছিলেন- যা আজ অনেক বড় হয়েছে, যার শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। বলাই বাহুল্য, এ বৃক্ষের ‘ফল’ এখন দুই দেশের জনগণ পেয়েছে ও পাচ্ছে।
বর্তমানে চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। আর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২০০০ সালের ৯০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০১৫ সালে ১৪৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ২০ শতাংশ। চীনের বাংলাদেশে রফতানির বার্ষিক মূল্য এখন প্রায় এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে চীনে বাংলাদেশের বার্ষিক রফতানি মাত্র ৮১ কোটি ডলার। আমরা আশাবাদী, চীনের প্রেসিডেন্টের এ সফরের ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ও অসমতা কমে আসবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভারতের গোয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবে বলে আমরা মনে করি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.