সম্প্রতি ফেসওয়াশ, ফেসিয়াল, স্ক্রাব, টুথপেস্টসহ বিবিধ পণ্যসামগ্রীতে মাইক্রোবিড বা মাইক্রোপ্লাস্টিক ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট শহর থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৭৯২৮ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক দেশের নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে গিয়ে জমা হচ্ছে। প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্রেতা এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নন। পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ‘এসডো’র গবেষণার ফলাফল হিসেবে এই নতুন তথ্যটি জনসম্মুখে আসে। গতকাল রাজধানীর লালমাটিয়ায় সংস্থাটির কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং-এর মাধ্যমে এসডো’র চেয়ারপারসন পৃষ্ঠা ৯ কলাম ১ সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ ও মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন মাইক্রোবিড/মাইক্রোপ্লাস্টিক-পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য এক নতুন হুমকি’ নামক এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। এই গবেষণার মাধ্যমে একটি ভীতিকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে যে, প্রতি মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট শহর থেকে যথাক্রমে ৬৬২৮ দশমিক ৪৬,১০৮৭ দশমিক ১৮ ও ২১২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক এদেশের নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে গিয়ে জমা হচ্ছে। যার ফলে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ক্যানসার ইত্যাদি ভয়াবহ রোগ দেহে বাসা বাঁধতে পারে। একই সঙ্গে এটি সামুদ্রিক জৈব দূষণকারী হিসেবেও কাজ করে। বিভিন্ন পণ্যে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ১ মিলিমিটারের চেয়েও ক্ষুদ্র গোলাকার আকৃতির ও নানাবিধ রঙের এই প্লাস্টিক কণা ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্লাস্টিক উপাদানসমূহ সাধারণত পলিথিলিইন (পিই), পলিমিথাইল মেথ্যাক্রিলেটে (পিএমএমএ), নাইলন, পলিইথিলিন টেরাফ্যাথালেট (পিইটি) এবং পলিপ্রোপাইলিন (পিপি)। এই কণাগুলো এতটাই সূক্ষ্ম যে সুয়েজ ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে এটি নির্মূল করা সম্ভব হয় না। মাছেরা এটিকে তাদের খাবার মনে করে খেয়ে ফেলে এবং এর মাধ্যমে এক সময় এটি মানব দেহে পৌঁছায়। আকারে অত্যন্ত ছোট হওয়ায় এর পৃষ্ঠতল বড় যেখানে দূষিত পদার্থ জমা হয়। তাই এটি প্রাণী দেহে প্রবেশ করলে লিভার, অন্ত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে। প্রসাধন সামগ্রী ও টুথপেস্টে ব্যবহৃত মাইক্রোবিড ত্বক ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, মাইক্রোবিড বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন প্রসঙ্গ। যেটি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। তার মতে, পরিবেশ, মানবদেহ ও সর্বোপরি আমাদের ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য রক্ষার্থে এ ব্যাপারে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। এসডোর মহাসচিব ইকোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, জলজ প্রাণী মাইক্রোবিডকে তাদের খাদ্য মনে করে প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করছে যেগুলো পুনরায় মানুষের দেহে সিফুড হিসেবে প্রবেশ করছে। এভাবে মাইক্রোবিড বিভিন্ন জলজ প্রাণী হতে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা দৈনন্দিন ব্যবহার্য এসব পণ্যে মাইক্রোবিড-এর মাত্রা সীমিত রাখার আইন প্রণয়নে জোর দেন। এসডোর বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন কি পরিমাণ প্লাস্টিক আবর্জনা আমাদের নদী, জলাশয় ও সমুদ্রে জমা হচ্ছে এবং জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদকুলকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, সেটি আমরা কেউ ভাবছি না। যার চরম মূল্য আমাদের ভবিষ্যতে দিতে হবে। এ ব্যাপারে তারা বাংলাদেশের সরকার ও সাধারণ জনগণের দৃষ্টি আর্কষণ করে মাইক্রোবিড নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি, মাইক্রোবিডযুক্ত পণ্যের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করার জন্য আইন প্রণয়নের উপর জোর দেন। গবেষণার ফলাফল: ঢাকা শহরে প্রচলিত ও ব্যবহৃত ৬০টি দেশি ও বিদেশি মোট ৬ প্রকারের পণ্য যেমন: ফেসওয়াশ, বডিওয়াশ, নেইলপালিশ, টুথপেস্ট, ফেস ও বডিস্ক্রাব পণ্য নিউমার্কেট, আগোরা, রাপাপ্লাজা থেকে সংগ্রহ করা হয়, যেগুলোর প্রতিটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোবিডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে এসব পণ্য থেকে মাইক্রোবিড আলাদা করা হয়। দলটি সাধারণ ক্রেতা, বিক্রেতা ও প্রস্তুতকারকদের ১৮০০ জনের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখতে পায়, প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্রেতা এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নন। মাইক্রোবিড দূষণের পরিমাণ জানার জন্য ঢাকা, সিলেট এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন জলাশয়ের মাগুর, রুই, মৃগেল, ইলিশ ও সরপুঁটি মাছে মাইক্রোবিডের উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখা গেছে ছোট মাছের চেয়ে রুই-এর মতো বড় মাছগুলোতে মাইক্রোবিডের পরিমাণ বেশি থাকে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.