শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা সদরের পট্টি লঞ্চঘাট এলাকায় গতকাল রোববার ভোরে ফিরোজ সরদার (১৮) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পরিবার বলছে, ফিরোজকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ দাবি করেছে, চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ফিরোজ উপজেলার মিত্র সেনপট্টি গ্রামের সবুজ সরদারের ছেলে। গোসাইরহাট থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ফিরোজ সরদার কৃষিকাজ করেন। রোববার রাত দুইটার দিকে পট্টি লঞ্চঘাট এলাকার সুমাইয়া আবাসিক হোটেলের মালিক সালাম পেদা ফিরোজকে মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে যান। ভোর চারটার দিকে সালাম পেদা ফিরোজের মা মাহমুদা বেগমেকে ফোন করে জানান, ফিরোজ নেশা করে তাঁর হোটেলের সামনে মাতলামি করছেন। মাহমুদা সেখানে গিয়ে দেখতে পান সুমাইয়া হোটেলের পাশের একটি করাতকলের ভেতর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন সালাম পেদাসহ ১০-১২ জন মানুষ। সেখান থেকে ফিরোজকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘটনা করেন। মাহমুদা বেগম বলেন, ‘সালাম আমাদের আত্মীয়। ফিরোজ প্রায়ই তাঁকে সহায়তা করার জন্য হোটেলে যেত। গভীর রাতে ফোন করে যেতে বলায় আমি যেতে বারণ করেছিলাম। ফোন পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখি আমার মানিকরে হাত–পা বাইন্ধা ফালাইয়া রাখছে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে ওরা বাধা দেয়। ছেলেরে জীবিত ফেরত পাইছি—এমন কথা লিখে সালাম একটি কাগজে আমার সই রাখে। ওরা ছেলেরে হাত-পা বাইন্ধা পিটাইয়া মাইরা ফালাইছে।’ গোসাইরহাট থানার ওসি মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণপিটুনিতে ফিরোজ মারা গেছেন। ঘটনাস্থলের আশপাশের মানুষ গণপিটুনির কোনো ঘটনা জানেন না—এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত না করে বলা যাবে না। দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের বারান্দার মেঝেতে ফিরোজের মরদেহ পড়ে আছে। সেখানে তাঁর মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা আহাজারি করছেন। সুমাইয়া আবাসিক হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা একটি পাকা ভবনের নিচতলার লোহার ফটক তালাবদ্ধ। ঘটনার পর থেকেই সালাম পেদা পলাতক। সুমাইয়া আবাসিক হোটেলের পাশে বসবাস করেন আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘গভীর রাতে মানুষের চিৎকারের আওয়াজ পাই। আমি বাড়িতে একা থাকায় ভয়ে বের হইনি। ভোরে শুনি এক লোককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।’ গোসাইরহাট বাজার বণিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল সরদার বলেন, কোনো গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি। ঘটলে বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা জানত। পরিকল্পিতভাবে ছেলেটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, নিহত ছেলেটি এর আগেও চুরির ঘটনা ঘটিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে ছেলেটি মারা গেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফিরোজের মরদেহ ময়নাতদন্ত করার জন্য দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখনো এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। পলাতক থাকায় সালাম পেদার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.