গৌরারং জমিদার বাড়ি দেখা ও তার ইতিহাসের খোঁজে ছুটে চলা । সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের গৌরারং গ্রামে অবস্থিত । গত ২০ আগষ্ট সুনামগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক হাফিজ ভাই ও ফারুককে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম ঐতিহাসীক এই বাড়ি দেখতে । সুনামগঞ্জ শহর হতে আব্দুজ জহুর সেতু পার হয়ে হাতের বাম দিকে সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কে ব্রীজ থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ২শ বছরের পুরনো এই জমিদার বাড়ি । পাশেই সুরমার শান্ত স্রোত, নব নির্মিত রাস্তার দু পাশে সারি সারি বৃক্ষরাজি, বিস্তীর্ন মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহ । গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলছে আমাদের মোটর সাইকেলের চাকা। পড়ন্ত বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাস, ধান গাছপালা গাঁয়ের আকা মেঠোপথ বেশ আকর্ষন করলো আমাদের । যা বর্তমানে সঠিক ব্যাবস্থাপনা করলে পর্যটকদের জন্য এই এলাকা হতে পারে একটি দর্শনীয় স্থান । বিকাল সাড়ে চার টার দিকে জমিদার বাড়িতে পৌছে বাড়ির বিভিন্ন দিক ঘুরে দেখতে লাগলাম । কথা বললাম স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে ।
বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ জমিদারি প্রথা। ১৯৫০ সালে জমিদারী প্রথা বন্ধ হওয়ার পর এখন তা কেবলই অতীত। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে -ছিটিয়ে রয়েছে দূষ্টিনন্দন মোঘল আমলে স্থাপিত জমিদারদের বিলাস বহুল পরিত্যক্ত অট্রালিকা । যা আজও ইতিহাসের স্বাক্ষি বহন করে। বর্তমানে জমিদার বাড়ির একাংশের ক্রয় সূত্রে মালিক নেপাল চক্রবর্তীর ছেলে বিজিত চক্রবর্তীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৮০০ সালের শুরুর দিকে সুনামগঞ্জ তথা ত্রই রাজ্যের জমিদারী প্রত্যয়ন করেন জমিদার রাজেন্দ্র কুমার চৌধুরী ও রাকেশ রঞ্জন চৌধুরী । এরপর সময়ের পরিবর্তনের সাথে তাদের উত্তরাধিকারী হিসেবে রাগেন্দ্র কুমার চৌধুরীর হাত ধরে জামিদারী বিস্তৃতি লাভ করে ।
তার পুত্র নিরঞ্জন চৌধুরী কয়েক বছর আগে তিনিও মারা গেছেন। নিরঞ্জন চৌধুরীর পরিবারের মধ্যে ছেলে অঞ্জন চৌধুরী তিনি বর্তমানে সুনামগঞ্জ পৌরসভায় কর্মরত। ২শ বছরের পুরনো হলেও অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে রয়েছে ৬ টি আলাদা ভবন , রংমহলের দেওয়ালে নর-নারী লতাপাতার ছবি, অন্দর মহল,সিংহাসন, জলসা ঘর, আজও পরিদর্শন করতে আসা মানুষকে আকূষ্ট করে । বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলে ত্রখন গা শিউরে উঠে , অন্ধকার থাকে ত্রককালে রঙিন আলো শুভাদানকারী রাজ কক্ষসমুহ। দালানের গায়ে শ্যাওলা জমে দেয়াল গুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে, পড়ে আছে গোবর ময়লা আবর্জনা । রাজ বাড়ীর মূল ভবনের ভিতরটা ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে । বিকালে কিংবা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই জমিদার বাড়ির পরিত্যাক্ত ভবন ও আশপাশে বসে জুয়ার আসর ।
রংমহল ভবনের সম্মুখভাগে রয়েছে বিশাল আকূতির ত্রকটি পুকুর, মূলভবনের ডান পাশে রয়েছে আরো ত্রকটি দীঘি যেখানে জমিদার বাড়ির নারীরা গোসল করতেন যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হয় জল বারান্দা। পুকুর পাড়ের জমিদারী ঘাট আজও অক্ষুন্ন রয়েই গেছে । পড়ন্ত বিকালে পুকুর পাড়ের ঘাটে বসে ঘুরতে যাওয়া মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটা কাছ থেকে উপভোগ করতে পারেন । বাড়ি ঘেরা অসংখ্য ছোট বড় গাছ গাছালি পুরাতন এই বাড়িটিকে যেন আগলে রেখেছেন ।
স্থানীয় বাসিন্দা বিজিত জানান, জমিদারদের উওরাধীকারদের মধ্যে কেউ আর এখানে থাকেননা । বাড়ির একটি অংশ তারা ক্রয় করেছেন আর আরেকটি অংশ একই গ্রামের অন্য একজন ক্রয় করেছেন ।
এলাকাবাসী জানান, সুনামগঞ্জ গৌরারং জমিদার বাড়ি ও এলাকা নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারলে এটিও হতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র । স্থানীয় বাসিন্দা বিজিত চক্রবর্তী জানান, জেলা প্রশাসন চাইলে উভয় পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে এই বাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এটিকে সংস্কার করে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে । প্রশাসন উদ্যোগ নিলে তারা সহযোগিতা করবেন । অবশেষে নেমে এলো সন্ধ্যা। এবার ফেরার পালা । এরআগে বিজিত বাবুর আতিথেয়তাও বেশ মুগ্ধ করলো আমাদের । আবার মোটর সাইকেলের চাকা ঘুরতে লাগলো সুনামগঞ্জ শহরের উদ্দেশ্যে ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.