আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লীতে এবারের সম্মেলনে বেশ রদবদল লক্ষ করা গেছে। নতুন মুখ যুক্ত পেয়েছেন ৭ জন। পুরনোদের মধ্যে পদ খুইয়েছেন নূহ-উল আলম লেনিন ও সতীশ চন্দ্র সেন।
কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পদোন্নতি পেয়ে সভাপতিম-লীতে জায়গা করে নিয়েছেন দলের সদ্যবিদায়ী কমিটির শিাবিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, দপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান খান। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা থেকে সর্বোচ্চ এই ফোরামে এসেছেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন এবং যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি পীযূষ ভট্টাচার্য। বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পদাধিকারবলে গত কমিটির সভাপতিম-লীতে থাকলেও স্বতন্ত্র পদ পেয়ে এবারই এই ফোরামে অন্তর্ভুক্ত হলেন তিনি।
সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবে পুরনোদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফরউল্লাহ, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
বাদ পড়েছেন নূহ-উল আলম লেনিন ও সতীশ চন্দ্র সেন। সভাপতিম-লীর ১৯টি পদের মধ্যে তিনটি পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন এবং পরবর্তীতে দুই সিটি করপোরেশনের আলোকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি রাখায় আবদুর রাজ্জাক ও ফারুক খানের ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এর ফলেই এ দুজন এসেছেন সভাপতিম-লীতে। জেলা কমিটির সিনিয়র নেতা হিসেবে রমেশ চন্দ্র সেন এবং পীযূষ ভট্টাচার্য ঠাঁই পেয়েছেন প্রেসিডিয়ামে। অবশ্য সর্বোচ্চ এই ফোরাম থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা সতীশ চন্দ্র সেন বাদ পড়ায়, তার স্থলে অপর একজন একই সম্প্রদায়ের নেতার অন্তর্ভুক্তি হওয়ার কথা প্রায় নিশ্চিত ছিল। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে বিনামূল্যে বইপ্রদান এবং পাসের হারের উন্নতিতে নুরুল ইসলাম নাহিদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাই তাকে সম্পাদকম-লী থেকে সভাপতিম-লীতে আনা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী মান্নান খান, দীর্ঘদিন থেকে দলে কোণঠাসা। মূলত তাকে পদোন্নতি দিয়ে তার প্রতি নিজের আস্থার জায়গাটি আবারও প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় নূহ-উল আলম লেনিনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয় আওয়ামী লীগ সভাপতির। ইমরান এইচ সরকার শুরুতে আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকলেও পরবর্তীতে সে সরকারবিরোধী বক্তব্য দেওয়া শুরু করে। ওই পরিস্থিতির জন্য লেনিনকে দায়ী করেন শেখ হাসিনা। কারণ ইমরান আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে লেনিনের নেতৃত্বাধীন দলটির প্রচার সেলের একজন অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। যদিও ইমরানের অবস্থান বদলের বিষয়ে নিজে কিছু জানতেন না- এই বার্তাটি দলের সভাপতির কাছে একাধিকবার দিয়েছিলেন লেনিন। তারপরও হয়তো তিনি সভাপতির ভুল ভাঙাতে পারেননি। মূলত এই কারণে লেনিন প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ পড়েছেন বলে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। তিনি যে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন না, তা এবারের সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত দলের গঠনতন্ত্র উপকমিটি মনোনয়ন দেখেই আঁচ করা গিয়েছিল। এর আগে এই দায়িত্ব পালন করতেন লেনিন, এবার এখানে তার স্থলে আসেন আবদুর রাজ্জাক। উত্তরবঙ্গের আরেক রাজনীতিবিদ সতীশ চন্দ্র সেন মূলত বয়সের কারণে প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ পড়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.