চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বিতর্কিত আউটের শিকার হন সাব্বির রহমান। তবে দ্বিতীয় দফা ব্যাটিংয়ে স্বরূপ দেখান তিনি। টেস্ট অভিষেকে রেকর্ডগড়া অর্ধশতক হাঁকালেন সাব্বির রহমান। আর গতকাল দিন শেষে তার ব্যাটেই ভর করে বাংলাদেশের ভক্ত সমর্থকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গতকাল ২৫৩/৮ সংগ্রহ নিয়ে দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। দিনশেষে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন ২৪ বছরের সাব্বির রহমান। ব্যাট হাতে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল ইসলামও। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে অভিষেক ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে অর্ধশতকের কৃতিত্ব দেখানো প্রথম ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। টেস্টের অভিষেক ইনিংসে সেঞ্চুরির ঘটনা রয়েছে আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ আশরাফুল, আবুল হাসান রাজুদের। তবে অভিষেক ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধশতকের কৃতিত্ব নেই বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যানের। গতকাল সাব্বির রহমান যখন ব্যাট হাতে ক্রিজে যান তখন টাইগাররা বিপদে। ব্যক্তিগত ২৪ রানে উইকেট দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মিডলঅর্ডার ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য তারকা সাকিব আল হাসান। দলের স্কোর তখন ১৪০/৫। তবে ক্রিজে সাবলিল দেখাচ্ছিল সাব্বিরকে। এতে ক্রিজে চাপ কমে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের ওপর থেকে। বাংলাদেশ ইনিংসের ৪০.৫তম ওভার শেষে ক্রিজে যান সাব্বির। ইংল্যান্ডের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অফস্পিনার মঈন আলীর ওভারের শেষ বলে আলতো ব্যাটে ডিফেন্সিভ শট খেলেন সাব্বির রহমান। বেন স্টোকসের মেডেন শেষে মঈন আলীর পরের ওভারে ১ রান নেন সাব্বির। তবে সাব্বির ক্রমেই গতি বাড়ান রানের চাকায়। ৪৫.২তম ওভারে মঈন আলীকে সপাটে ছক্কা হাঁকান সাব্বির। এক ওভারের বিরতিতে ফের মঈনকে রক্তচক্ষু দেখান সাব্বির। ৪৮তম ওভারের শুরুর দুই বলে ছক্কা-বাউন্ডারিতে স্কোর বোর্ডে ১০ রান জমা করেন সাব্বির। আর ইংলিশ অফস্পিনার গ্যারেথ ব্যাটিকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক পূর্ণ করেন সাব্বির রহমান। ৭৬ বলে অর্ধশতকের পথে সাব্বির হাঁকান তিনটি চার ও দুটি ছক্কা। পরে অল্প ব্যবধানে সতীর্থ তিন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরতে দেখেন সাব্বির। সাব্বিরের ফিফটি পূরণের পর পরই ব্যক্তিগত ৩৯ রানে উইকেট দেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। এতে ভাঙে সাব্বির-মুশফিকের ৮৭ রানের জুটি। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ষষ্ঠ উইকেটে এটি বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের জুটি। বাংলাদেশের এমন শীর্ষ রেকর্ডটিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০১০ সালের মার্চে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ ইনিংসের ষষ্ঠ উইকেটে ১৬৭ রানের জুটি গড়েন জুনাইদ সিদ্দিকী ও মুশফিকুর রহীম। গতকাল চা বিরতির পর মুশফিকের বিদায়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২২৭/৬-এ। পরের ১১ রানে সাব্বির ব্যাট হাতে সাজঘরে ফিরতে দেখেন সতীর্থ অপর দুই অভিষিক্ত তারকা মেহেদী হাসান মিরাজ ও কামরুল ইসলাম রাব্বিকে। ম্যাচের উভয় ইনিংসে ১ রানে উইকেট দেন মিরাজ। আর ম্যাচে ‘পেয়ার’-এর হতাশা রাব্বির। দুই ইনিংসেই ‘০’ রানে উইকেট দেন অভিষিক্ত এ ক্রিকেটার। তবে দিনশেষে নিজের উইকেট ও ভক্ত-সমর্থকদের আশা-ভরসা ধরে রাখেন সাব্বির রহমান। ৯৩ বলের ইনিংসে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান। মাত্র ষোল বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক সাব্বির রহমানের। ২০০৮ সালের অক্টোবরে জাতীয় ক্রিকেট লীগে বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে রাজশাহী বিভাগের ক্যাপ মাথায় মাঠে নামেন সাব্বির রহমান। ৩৫ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে সাব্বির রহমানের সংগ্রহ ১৮৪০ রান। তার রানের গড় ৩৪.৯১। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৩৬। গতকাল দিন শেষে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩৩ রানের। এটি ইতিহাসের ২২২৫তম টেস্ট ম্যাচ। তবে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ২৮৬ বা তার বেশি রান তাড়া করে জয়ের ঘটনা রয়েছে মাত্রই ৩৪ বার। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এমন জয়ের ঘটনা দেখা গেছে সাকুল্যে ৫ বার। আগের দিনের ২২৮/৮ সংগ্রহ নিয়ে গতকাল সকালে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের সংগ্রহটা বাড়েনি খুব একটা। স্টুয়ার্ট ব্রড রানআউট ও গ্যারেথ ব্যাটির উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রানে গুঁড়িয়ে যায় ইংল্যান্ড। এতে ২৮৬ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। ৪র্থ ইনিংসের ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি রান প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল জুনাইদ সিদ্দিকী-মুশফিক ১৬৭ ইংল্যান্ড চট্টগ্রাম মার্চ ২০১০ মো. আশরাফুল-সাকিব ১১২ শ্রীলঙ্কা ঢাকা ডিসে. ২০০৮ মুশফিকুর রহীম-সাকিব ৯২ শ্রীলঙ্কা চট্টগ্রাম জানু. ২০০৯ মুশফিক-সাব্বির রহমান ৮৭ ইংল্যান্ড চট্টগ্রাম অক্টো. ২০১৬ খালেদ মাসুদ-রাজিন সালেহ ৭৯* জিম্বাবুয়ে ঢাকা জানু. ২০০৫ স্কোর কার্ড (পঞ্চম দিন) বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড প্রথম টেস্ট জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম ২০-২৪শে অক্টোবর ২০১৬ টস: ইংল্যান্ড ব্যাটিং ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ২৯৩ আগের দিন: ইংল্যান্ড ২২৮/৮ ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬ ক্রিস ওকস অপরাজিত ১৯ ৬২ ১ ০ আদিল রশিদ এলবি সাকিব ৯ ১৮ ২ ০ স্টুয়ার্ট ব্রড রান আউট ১০ ২৮ ২ ০ বাটি এলবি তাইজুল ৩ ৮ ০ ০ অতিরিক্ত (ব ৩ লে ৮ পে ৫) ১৬ মোট (৮ উইকেটে; ৭৬ ওভার) ২২৮ উইকেট পতন: ১-২৬ (কুক, ৮.১ ওভার), ২-২৭ (রুট, ৯.২), ৩-২৮ (ডকেট, ১১.২), ৪-৪৬ (ব্যালেন্স, ১৮.২), ৫-৬২ (মঈন আলী, ২৭.১), ৬-১৮৯ ( বেয়ারস্টো, ৬১.৪.৬), ৭-১৯৭ (স্টকস, ৬৪.২.৬), ৮-২১৩ (রশিদ ৬৮.৪) ৯-২৩৩ (ব্রড ৭৭.৫) ১০-২৪০ (বাটি ৮০.২) বোলিং: মিরাজ ২০-১-৫৮-১, সাকিব ৩৩-৭-৮৫-৫, তাইজুল ১৫.২-২-৪১-২, রাব্বি ৮-০-২৪-১, মাহমুদুল্লাহ ১-০-৬-০, শফিউল ৩-০-১০-০। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস রান বল ৪ ৬ তামিম ক ব্যালেন্স ব আলী ৯ ৩৩ ০ ০ ইমরুল ক রুট রশিদ ৪৩ ৬১ ৬ ০ মুমিনুল এলবি বাটি ২৭ ৪৭ ৪ ০ মাহামুদুল্লাহ এলবি বাটি ১৭ ৩৬ ০ ০ সাকিব ক বেয়ারস্টো ব আলী ২৪ ৩৯ ১ ১ মুশফিক ক ব্যালেন্স ব বাটি ৩৯ ১২৪ ৩ ০ সাব্বির অপরাজিত ৫৯ ৯৩ ৩ ২ মেহেদি এলবি ব্রড ১ ৯ ০ ০ রাব্বি ক ব্যালেন্স ব বোল্ড ০ ৩ ০ ০ তাইজুল ইসলাম অপরাজিত ১১ ২৩ ১ ০ অতিরিক্ত (বা ৯ লে ১৩, ও ১) ২৩ মোট (৮উইকেট; ৭৮ ওভার) ২৫৩ উইকেট পতন: ১-৩৫ (তামিম, ৯.৫), ২-৮১ (ইমরুল, ২০.১), ৩-১০৩ (মুমিনুল, ২৭.৫), ৪-১০৮ (মাহামুদুল্লাহ, ২৯.৬), ৫-১৪০ (সাকিব, ৪০.৫) ৬-২২৭ (মুশফিক, ৬৭.৫) ৭-২৩৪ (মেহেদি, ৭০.৫ ওভার) ৮-২৩৮ (রাব্বি, ৭২.৪)। বোলিং: ব্যাটি ১৭-৩-৬৫-৩, মঈন আলী ১৪-২-৬০-২, ওকস ৭-৩-১০-০, রশিদ ১৭-২-৫৫-১, স্টোকস ১০-২-১৫-০, ব্রড ১৩-৪-২৬-২।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.