ইয়াবা। মরণ নেশা। নানা কারণ। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইয়াবার ভয়াল আসক্তি বাড়ছে ক্রমশ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারা দেশে ইয়াবাসেবী রয়েছে প্রায় ২ লাখ। তাদের মধ্যে প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থী। এরমধ্যে রয়েছে ১০ হাজার নারী শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীদের বয়স ১৭ থেকে ২৫-এর মধ্যে। এদের প্রায় ৭০ শতাংশ উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। ইয়াবায় আসক্ত শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া। অষ্টম শ্রেণি থেকে শুরু করে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ইয়াবা সেবন করে থাকে। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার জন বিভিন্ন স্তুরের পুরুষ ও নারী ওই নেশায় আসক্ত রয়েছে। ২০১৬ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিজস্ব জরিপে ওই তথ্য উঠে এসেছে। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, ইয়াবা নামক মরণ নেশার আসক্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রায় ৯০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ইয়াবা সেবন করে থাকে। সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্র ও দেশের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালিয়ে ওই তথ্য পাওয়া গেছে। ওই নেশা করলে শিক্ষার্থীরা কি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে তা অবগত করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারা দেশে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চালানো হয়ে থাকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ ইয়াবা আসে মিয়ানমার থেকে। কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়া সীমান্ত দিয়ে ওই সর্বনাশা মাদক দেশে প্রবেশ করে থাকে। এরপর চোরাকারবারিদের মাধ্যমে ইয়াবা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগের চেয়ে কঠোর নজরদারির কারণে ওই চোরাচালান কিছুটা রোধ হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যেসব শিক্ষার্থী ইয়াবা সেবন করে তাদের অধিকাংশই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া। যেসব শিক্ষার্থীরা ইয়াবা সেবন করে থাকে তাদের মধ্যে ঢাকা এবং বিভাগীয় শহরের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি। জেলা শহর এবং থানা এলাকাগুলোতে ইয়াবাসেবী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম। ওই অঞ্চলে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত লোকজনের বসবাস হওয়ার কারণে তাদের সন্তানরা বেশি দামে ইয়াবা ক্রয় করে সেবন করতে পারে না বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জরিপে উঠে এসেছে। আর ইয়াবা ট্যাবলেটের অধিক দাম হওয়ার কারণে ধনী পরিবারের শিক্ষার্থীরা ওই মাদক ক্রয় করে সেবন করে থাকে। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে সারা দেশে ইয়াবাসেবী শিক্ষার্থী ছিল ৪০ হাজার। তার পরের বছর উচ্চহারে ওই সংখ্যা বেড়ে যায় ৭৫ হাজার ৫০০ জনে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০ হাজারে। গত বছরের চেয়ে বাড়তি ১৪ হাজার ৫০০ জন শিক্ষার্থী ওই মরণ নেশায় আসক্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সদীপ রঞ্জন দেব মানবজমিনকে জানান, যে কোনো মাদক একজন সুস্থ মানুষকে মৃত্যুর আঙিনায় ঠেলে দেয়। যেসব শিক্ষার্থী ইয়াবা সেবন করে তাদের কিডনি দুর্বল হয়ে যায়। স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। পড়াশোনায় মনোযোগ থাকে না। ওই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ আস্তে আস্তে ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি আরো জানান, অনেকেই মনে করেন, ইয়াবা সেবন করলে যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ওই ধারণা একেবারেই ভুল। বরং ওই নেশা যৌনশক্তিকে একেবারে দুর্বল করে দেয়। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান মানবজমিনকে জানান, মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবীদের বিষয়ে পুলিশের অবস্থান হচ্ছে সব সময় জিরো টলারেন্স। তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.