পেশাদার ফুটবলে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে এক যুগ হতে চললো। এ সময়ের মধ্যে পেশাদার লীগের আট আসর শেষ হয়ে নবম আসরও শেষের পথে। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় মোটেও পেশাদারিত্ব আসেনি ক্লাবগুলোতে। ফুটবলারদের মাঝেও পেশাদারিত্বে ছিটেফোঁটাও লক্ষ্য করা যায় না। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেও পুরোপুরি পেশাদারিত্বের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেনি। ক্লাব ও ফুটবলারদের মাঝে পেশাদারিত্ব আনতে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সহযোগিতায় এক সেমিনার আয়োজন করে বাফুফে। পেশাদার লীগের ছয়টি ক্লাব অংশ নেয় এই সেমিনারে। সকালের আয়োজনে চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের সঙ্গে ছিল রানার্সআপ শেখ রাসেল ও মোহামেডান। বিকালে গেলো আসরে চতুর্থস্থান পাওয়া ঢাকা আবাহনীর সঙ্গে পেশাদারিত্বের দীক্ষা নেয় মুক্তিযোদ্ধা ও ব্রাদার্স। পেশাদার একজন ফুটবলারের দায়িত্ব কী হওয়া উচিত। ক্লাবের বা কী করণীয় আছে। মূলত এসব নিয়ে দিনভর আলোচনা করেন এএফসির ডেভলেপমেন্ট অফিসার ইউগেস দেসাই। আলোচনা শেষে তিনি বলেন, এখানকার অনেক ফুটবলারের চুক্তি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই। আমি এটা বোঝাবার চেষ্টা করেছি। মাঠ ও মাঠের বাইরে একজন পেশাদার ফুটবলারের আচরণ কেমন হবে তাও বুঝানো হয়েছে এই সেমিনারে। সেমিনারে অংশ নিয়ে আবাহনীর ডিফেন্ডার আরিফুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ আগে নেয়া হলে সেটা প্লেয়ারদের জন্য অনেক ভালো হতো। আমাদের কালচারে অসুবিধা আছে। আমরা বেশির ভাগ সময় কনট্রাক্ট পেপার পুরোপুরি না পড়ে সই করে দেই, এটা ঠিক না। এই সেমিনারে আমাদের সেটা বোঝানো হয়েছে। চুক্তির এ বিষয়গুলো আমাদের আগে জানা থাকলে আমরা অতীতে ঠকতাম না। এখানে বলা হয়েছে ক্লাবের হয়ে খেলার সময় ইনজুরিতে পড়লে সকল দায়দায়িত্ব ক্লাবকেই নিতে হবে। কিন্তু দেখা গেছে ইনজুরিতে পড়লে ক্লাব দায়ভার বহন করে না। তখন নিজের টাকা খরচ করে ইনজুরির চিকিৎসা করাতে হয়। আমার ক্ষেত্রে দুই বার এটা হয়েছে। দু’বার ইনজুরির কারণে খেলতে পারেনি মোহামেডান ও শেখ জামালের হয়ে। তারা চিকিৎসা তো করায়ই নি, উল্টো দুই ক্লাবকে যথাক্রমে ৭ লাখ ও ১৩ লাখ টাকা আমার ফেরত দিতে হয়েছে। এ কারণেই শুধু প্লেয়ারদের পেশাদারিত্ব শেখালে হবে না, ক্লাব অফিসিয়াল এবং কোচদের নিয়ে এক সঙ্গে এরকম সেমিনার হলে ভালো হয়। এই সেমিনার ভবিষ্যতে আমাদের চুক্তি করতে গেলে সহায়তা করবে। শুধু ক্লাবের সমস্যা নয়, পেশাদারিত্বের সমস্যা আছে বাফুফেরও। দেখা গেলো অনেক ফুটবলার আছেন যারা ক্লাবের কাছে টাকা পায়। তারা টাকা চেয়ে বাফুফের কাছে আবেদন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না তারা। অথচ কোনো ক্লাব কোনো ফুটবলারের কাছে টাকা পেলে তৎক্ষণাৎ সভা ডেকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। বাফুফের এমন দ্বৈত নীতিতেও পরিবর্তনের আবেদন জানান এই ডিফেন্ডার। ক্লাবগুলোতে সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন এএফসি প্রতিনিধিরা। তারা জানান, এখানকার ক্লাবগুলোতে এখন পেশাদার অবকাঠামো তৈরি হয়নি। দেশের ফুটবলে সার্বিক উন্নতিতে ক্লাবগুলোর এসব পরিবর্তন খুবই জরুরি। আজ একই সেমিনারে অংশ নিবে পেশাদার লীগের বাকি ছয় দল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.