মাত্র পাঁচ বছরের ফুটফুটে শিশু। এখনও ভাল-মন্দ বোঝার বয়স হয়নি তার। দিনাজপুরের পার্বতীপুর জমিরহাট তকেয়াপাড়া গ্রামের ওই শিশুটি জেঠা বলে ডাকতো সাইফুলকে। শিশুটির বাবাও সাইফুলকে বড় ভাই হিসেবে সম্মান করতো। কিন্তু এই সাইফুল যে এতো ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে তা কল্পনাও করতে পারেনি কেউ।
সহজ-সরল অবুঝ এই শিশুকে চকলেট ও সন্দেশ দেয়ার লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করে সাইফুল। শিশুটি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
সবাই যখন বাচ্চাটিকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন তখনও সাইফুল শিশুটির পরিবারের সদস্যদের অভয় দিয়েছে। দিয়েছে নানা পরামর্শও। কেউ বুঝতে পারেনি সাইফুলের হাতেই সর্বনাশ হয়েছে শিশুটির।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বসে শিশুটির বাবা পিকআপভ্যান চালক জানান, ১৮ অক্টোবর বাড়ির পাশে খেলা করছিল তার একমাত্র কন্যাশিশুটি। দুপুর ১২টার পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান মিলছিল না। রাতে মাইকিং করা হয়। মসজিদে ঘোষণা দেয়া হয়। আশপাশের পুকুরেও চলে সন্ধান। পরদিন ভোরে বাড়ির পাশে হলুদক্ষেতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে পাওয়া যায়।
তিনি জানান, ঘটনার দিন বিকাল ৪টার দিকে সাইফুল এসে বলে- তোমার বাচ্চাকে খোঁজার কোনো দরকার নেই। তোমরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও। বাচ্চাকে পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, মেয়েটি সাইফুলকে জেঠা বলে ডাকতো। সবাই তাকে আদর করতো। ভাবতেও পারিনি যে, এই শিশুটি সাইফুলের পাশবিকতার শিকার হবে। ঘটনার পরদিন উদ্ধারের পর ভেবেছিলাম, ঠাণ্ডাজনিত কারণে হয়তো শিশুটি অচেতন হয়ে গেছে। পরে হাত-পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত, গাল ও গলায় কামড়ের চিহ্ন এবং শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়ার ক্ষত অন্যকিছু ধারণা হয়। তারপরও সাইফুলকে সন্দেহ হয়নি।
শিশুটির প্রতিবেশী ও পিকআপ ভ্যানের মালিক জানান, আমি ভেবেছিলাম- সাইফুল যেহেতু মদ খায়, জুয়া খেলে তাই হয়তো কিছু টাকার জন্যে ওই বাচ্চাটিকে সরিয়ে রাখতে পারে। সেজন্যে হয়তো অভয় দিচ্ছে। কিন্তু সে কোনো টাকা দাবি করেনি। তাকে ভয় দেখাতে পাশের গ্রাম থেকে রাতে কবিরাজ নিয়ে আসি। কবিরাজ আনার পর সাইফুল বাড়িতে এসে সুকৌশলে মেয়েটির বাবাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় দেড় কিলোমিটার দূরে আফজাল কবিরাজের কাছে। ওই সময় সাইফুল মেয়েটির বাবাকে বলে, আমি তোমাকে কার কাছে নিয়ে যাচ্ছি? সেখানে কী কথা হল- তা কাউকে বলবে না। তুমি তোমার মেয়ে পেয়ে যাবে।
পরে গভীর রাতে সাইফুল এবং মেয়েটির বাবা বাড়িতে আসে। কিন্তু তারা কোনো কথা বলে না। শিশুটির বাবা ও সাইফুল কোথায় গিয়েছিল, কী কথা হয়েছিল তা জানতে ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে শিশুটির বাবাকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যাই। ওই সময় একটি খবর আসে- আট কিলোমিটার দূরে অন্য একটি গ্রামে মেয়েটিকে পাওয়া গেছে। তাই মেয়েটির বাবার সঙ্গে আর কোনো কথা না বলেই মোটসাইকেলযোগে ওই গ্রামে চলে যাই। কিন্তু তাকে না পেয়ে ফেরত আসি।
পরে মেয়েটির বাবার কাছে আবার জানতে চাই, সাইফুল তাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল, কী কথা হয়েছে? মেয়েটির বাবা জানায়, সাইফুল তাকে আফজাল কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। কবিরাজ বলেছে, তুমি মন্দিরে চাঁদা দেওনি। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে নিরামিষ খেয়েছ। যাও, মাজারে গিয়ে ১০১ টাকা দিয়ে আস, তোমার মেয়েকে পেয়ে যাবে।
পিকআপ ভ্যানের মালিক জানান, বাচ্চাটিকে পাওয়ার পর সাইফুল আমাদের বলে- তাকে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর দরকার নেই। একটু ঝাড়ফুঁক দিলেই ভাল হয়ে যাবে। এরপরই সাইফুলকে ঘিরে সন্দেহ তৈরি হয়। ২০ অক্টোবর সাইফুল ও আফজাল কবিরাজের নামে থানায় মামলা করা হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.