সিরিয়াল কিলার
একের পর এক হামলা। প্রাণ দিতে হয়েছে দু’জনকে। যারা বেঁচে আছেন তাদের অবস্থাও ভালো নেই। হত্যা ও হামলার শিকার প্রত্যেকেই নারী। কিলার হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে সে ৩৫ বছর বয়সী এক যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সে শিক্ষিত ও ভদ্র। দেখে বোঝার উপায় নেই ওই লোকটি একজন ভয়ঙ্কর কিলার। যাদের ওপর হামলা হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই ৪৫ বছর বা তারও বেশি বয়সী নারী। কেন, কী কারণে এই সিরিয়াল কিলারের টার্গেট হচ্ছেন নারীরা? পুলিশ ও নির্যাতিতাদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে প্রতিটি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে সিরিয়াল কিলার। টু লেট দেখে বাসা ভাড়ার অজুহাতে প্রতিটি বাসায় ঢুকলেও টু লেটে থাকা ফোনে কখনো কল করেনি। বাড়িতে মানুষের উপস্থিতি থাকলে নীরবেই ফিরে গেছে। সুযোগ বুঝে, নির্জন কক্ষে প্রতিটি হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে কিলার। ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে হতবাক পুলিশ কর্মকর্তারাও। আজ পর্যন্ত ওই কিলারকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি তারা। তবে তাকে গ্রেপ্তার করতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটনের উত্তরা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নুরুল আলম বলেন, যে কোনো কারণে হয়তো ওই লোক বাড়ির নারী মালিক কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে তাকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের পর এসব কর্মকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। এই সিরিয়াল কিলারকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দারা যৌথ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি। কিলার গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে দক্ষিণখান এলাকায়। বাড়ানো হয়েছে পুলিশ, র্যাবের টহল। দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ রোকনুজ্জামান জানান, প্রথম হামলার ঘটনাটি ঘটে আশকোনা মেডিকেল রোডের একটি বাসায়। তখনও মনে হয়নি এটা ধারাবাহিক ঘটতেই থাকবে বা এটা কোনো সিরিয়াল কিলারের কাণ্ড। পর পর কয়েক ঘটনা ঘটার পরই তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন। পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়। পাড়ায় পাড়ায় এ বিষয়ে বৈঠক করে পুলিশ। এমনকি মাইকিং করে মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন ও কিলারকে ধরিয়ে দিতে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়। শেখ রোকনুজ্জামান বলেন, এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো তদন্ত করতে গিয়ে মনে হয়েছে, বাড়ির নারী মালিকের প্রতি তার ক্ষোভ রয়েছে। যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়েই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। সেটা প্রেম সংক্রান্ত হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তাকে গ্রেপ্তার করলেই হামলার কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। সিরিয়াল কিলারকে গ্রেপ্তার করতে না পারাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা বলেই মনে করেন সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক। তিনি বলেন, যে কোনো কারণে যে কোনো ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক বিকৃতি ঘটতে পারে। সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে। অনেক সিম্পল ইস্যু থেকে এটি ঘটতে পারে। উদাহরণ হিসেবে সিরিয়াল কিলার রসু খাঁ’র নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম কাজ হচ্ছে তাকে ধরতে হবে। তাতে ধরার পর তার কথা শুনে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। মানসিক বিকৃতির কারণে এটি ঘটে থাকলে তাকে সংশোধনমূলক শাস্তি দিতে হবে বলে মনে করেন এই অপরাধ বিশ্লেষক। নারীদের ওপর এই হামলার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে মানসিক বিশেষজ্ঞ ও লেখক ডা. মুহিত কামাল বলেন, নারী বিষয়ক ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ ধরনের হামলার স্পৃহার জন্ম হতে পারে। কোনো নারীর কাছ থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে এমনটি করতে পারে সে। এজন্যই প্রতিটি হামলা হচ্ছে নারীদের ওপর। এ থেকে সে সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠতে পারে। দেখা যাবে, তার পরিচিত কেউ জানে না সে একজন কিলার। সে হাসি-খুশি জীবনযাপন করছে। অন্য আট-দশজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। এরমধ্যেই হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। অনেক সময় সমাজবিরোধী ব্যক্তিরা এসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তবে ওই কিলারের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.