ব্যাংকিং খাতে ঋণ খেলাপের পাশাপাশি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপও উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, খেলাপি ঋণ সংকটে আক্রান্ত ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গত জুন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি। বলা বাহুল্য, আর্থিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠান নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছেন আমানতকারীরা। প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রায় আড়াই লাখ ঋণগ্রহীতা ও আমানতকারী রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৫০ হাজারই ভুগছেন ঝুঁকিতে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঋণ খেলাপ ও লুটপাটের যে রাজত্ব চলছে, সন্দেহ নেই এর পেছনে রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের কারসাজি। পর্ষদের সদস্যরা তাদের ব্যক্তি ও গ্র“প স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজেরা দুর্নীতি করছেন, অন্যদের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে ফায়দা লুটছেন। একটি সূত্রমতে, তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে। আমরা ব্যাংকিং খাতের পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা জেনেছি অনেক আগেই, ব্যাংকগুলোর অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক তৎপরও হয়েছে। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিগ্রস্ত পরিচালক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও দুদক যেন তাদের কার্যক্রম চালু করে। দুর্নীতিগ্রস্ত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ারও প্রস্তাব উঠেছে। অর্থনীতির বিশ্লেষকরা ইতিমধ্যেই এ ধরনের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার সুস্পষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এই পরামর্শ মেনে চলাই হবে যুক্তিযুক্ত কাজ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সন্দেহযুক্ত ও অভিযুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মনিটর করার জন্য পর্যবেক্ষক বসিয়েছে বলে জানা গেছে। পর্যবেক্ষকরা কোনো ধরনের সুবিধায় প্রলুব্ধ হয়ে কিংবা উচ্চ মহলের প্রভাবে যাতে পরিস্থিতির ভিন্ন ব্যাখ্যা দিতে না পারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই। অপরাধ গুরুতর সন্দেহ নেই, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক পথে বসতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ব্যাংকের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজন পড়ে ৪০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই টাকার পরিমাণ ১০০ কোটি। অথচ এই সামান্য বিনিয়োগ থেকেও টাকা সরিয়ে নিচ্ছে দুর্নীতিবাজ চক্র। এ অবস্থা মেনে নেয়া যায় না।
দেশের আর্থিক খাত, বিশেষত ব্যাংকিং সেক্টরে চলছে বিশৃংখলা, অনিয়ম ও দুর্নীতি, যার প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এতে। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি ও অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করতে না পারলে তা সংক্রমিত হয়ে আরও বাড়বে, বলাই বাহুল্য। তাই বড় ব্যাংকের বড় ঋণ খেলাপ ও দুর্নীতি তো বটেই, ছোট প্রতিষ্ঠানের ছোট খেলাপ ও দুর্নীতি- কোনোটাকেই ছাড় দেয়া যাবে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.