ওয়ানডে নয়, টি-২০ নয়, একেবারে টেস্ট। জিম্বাবুয়ে বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, ইংল্যান্ড। অভিষেকটা স্বপ্নের মতই। এরপর যা ঘটলো তা মেহেদী হাসান মিরাজের জন্য স্বপ্নময়ই হয়ে থাকলো। দুই টেস্টেই রেকর্ডের ভুবনে প্রবেশ। অভিষেক ম্যাচে কম বয়সী ৫ উইকেট নেয়ার তকমা। এরপরে বিশ্বের একমাত্র অফ স্পিনার হিসেবে পরপর দুই টেস্টে ৫ উইকেট নেয়ার রেকর্ড। যা শেষ হয়েছে এক টেস্টে দেশের সর্বাধিক ১২ উইকেট নেয়ার মধ্য দিয়ে। বিশ্ব ক্রিকেটে মিরাজের আগে মাত্র ৫ জন অভিষেকে দুই টেস্টের ৩ বার পাঁচ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। নিজের এই অসাধারণ সাফল্যে ১৯ বছর বয়সী তরুণের আত্মহারা থাকারই কথা। কিন্তু ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে জানালেন নিজের সাফল্যে দেশকে জয় দিতে পারার খুশিটাই সবচেয়ে বেশি। মিরাজ বলেন, ‘আসলে আমি অনেক কিছু করছি সে জন্য নয় আমার সবচেয়ে ভালো লাগছে যে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে সেটির জন্য। দেশের জয়টাই আমার কাছে বড় পাওয়া।’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে মিরাজের শিকার ছিল ৬ উইকেট। তাই পরের ইনিংসে প্রার্থনা ছিল ব্যাটসম্যানরা যে লক্ষ্যই দিক ইংল্যান্ডকে জয়ের জন্য সেটি নিয়ে বল হাতে লড়াই করা। কিন্তু মাত্র ২৩ ওভারে ১০০ তুলে ফেলেন দুই ওপেনার অ্যালেস্টার কুক ও বেন ডাকেট। বাংলাদেশের বোলাররা অসহায়। চা বিরতির পর সব চিত্র বদলে দেন মিরাজ। ৬৪ বলে ৫৬ রান করা বেন ডাকেটকে বোল্ড করেন দারুণ এক বলে। সেই শুরু। একে একে ছয়টি উইকেট পুরে নেন নিজের ঝুলিতে। কিন্তু কী মন্ত্রে হঠাৎ চা বিরতিতে ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি? জানালেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের মন্ত্রই তাকে জাগিয়ে দিয়েছে। মিরাজ বলেন, ‘ওরা যখন রান নিচ্ছিল স্কোর বোর্ডে প্রায় ১০০ রান উঠে যায়। তখন মুশফিক ভাই আমাদের বলেছিলেন যেন রানটা আটকাতে পারি। যাতে ওরা চাপে পড়ে আর উইকেট দেয়। আমি সেই চেষ্টাই করছিলাম। সঙ্গে সাকিব ভাই, তাইজুল ভাইও একই কাজ করছিল। অবশেষে আমরা সফল হই।’ গত মাসে যখন ইংল্যান্ড বাংলাদেশে খেলতে আসে তখনও মিরাজ কল্পনা করেনি জাতীয় দলে ডাক পাবেন। কিন্তু ডাক পেয়েই বদলে গেলেন তিনি। তাহলে কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল এমন কিছু করার। মিরাজ বলেন, ‘আসলে আমি ভাবিনি এত দ্রুত ডাক পাবো। একটা পরিকল্পনা ছিল যখনই ডাক পাবো তখনই যেন নিজের সেরাটা দিতে পারি। একম্যাচ ভালো করলাম আর এক ম্যাচ ভালো হলো না, তা নয়। আমার চাওয়া ছিল ছোট ছোট হলেও যেন দলের জন্য অবদান রাখতে পারি। এই উইকেটে আমি সাহায্য পেয়েছি। জানি দেশের বাইরে এমন উইকেট হবে না। কিন্তু আমি তার জন্যও প্রস্তুত। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজেকে সেই ভাবে প্রস্তুত করে নেয়া। আমি নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত রাখতে চাই যেন যে কোনো পরিস্থিতিতে দেশে ও দেশের বাইরে যেন দ্রুত মানিয়ে নিয়ে দলের জন্য কিছু করতে পারি।’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মিরাজের অনেক স্বপ্নই পূরণ হয়েছে। মিরাজ জানালেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল যাদের খেলা আমি টিভিতে দেখেছি তাদের সঙ্গে মাঠে খেলার। সেটি পূরণ হয়েছে। আমি মুশফিক ভাই, সাকিব ভাই, তামিম ভাই, মাহমুদুল্লাহ ভাইদের সঙ্গে খেলতে পারছি। সত্যি কথা বলতে কি আমি মাত্র দুই টেস্টে তাদের সঙ্গে খেলছি তা তারা বুঝতেই দেয়নি। মনে হয়েছে আমি অনেক দিন তাদের সঙ্গে খেলছি।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.