কোয়েটাকে একসময় ‘ছোট্ট প্যারিস’ বলা হতো। মনোরম আবহাওয়া, অল্প জনসংখ্যা আর প্রচুর ফলের বাগানের কারণে কোয়েটা এই সুখ্যাতি অর্জন করে।
বর্তমানে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের এই রাজধানী শহরটির চেহারা আর আগের মতো নেই। শহরটি অনেকটা এলোমেলো। রাস্তাঘাট জনাকীর্ণ। ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, আসন্ন বিপদের অনুভূতি ও ভীতি কোয়েটার বাসিন্দাদের পেয়ে বসেছে। দিনকে দিন এই ভীতি বাড়ছে।প্রায় আড়াই মাস আগে গত আগস্টে কোয়েটার একটি হাসপাতালে জঙ্গি হামলায় ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। সেই ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী হামলার দৃশ্য এখনো তাজা। এর মধ্যে গত ২৪ অক্টোবর আরেকটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলা দেখল কোয়েটাবাসী। এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল কোয়েটার পুলিশ একাডেমি। হামলায় অর্ধশতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। পুলিশ একাডেমির মতো স্থানে জঙ্গি হামলার ঘটনা শহরটির মানুষের মধ্যে ভীতির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
কোয়েটাভিত্তিক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহজাদা জুলফিকার বলেন, গত আগস্টে জঙ্গি হামলার পর থেকেই সাংবাদিক, আইনজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। অনুষ্ঠান-আয়োজনে জোর নিরাপত্তা নেওয়া হচ্ছে। শহরে একধরনের ভীতির অনুভূতি আছে। ভবিষ্যতে জঙ্গি হামলা হলে আহত ব্যক্তিদের সহায়তায় মানুষ হয়তো এগিয়েও যাবে না। কোয়েটায় সন্ত্রাসী হামলা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখন হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিবর্তন এসেছে। অতীতে জঙ্গিরা মূলত শিয়াদের লক্ষ্য করে হামলা চালাত। এখন ‘সফট টার্গেট’-এর ওপর হামলা বাড়ছে।
কোয়েটায় সাম্প্রতিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান তাদের চিরশত্রু ভারতকে দোষারোপ করতে শুরু করেছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, বেলুচিস্তানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে আফগানিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরও এখন কোয়েটায়। তারা কোয়েটাকে আফগান তালেবানের অভয়স্থল ভাবছে।
অনেকের মতে, কোয়েটা আঞ্চলিক শক্তি ও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর জটিল সমীকরণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বলে মনে হয়।
গত শতকের ৮০ ও ৯০-এর দশকেও কোয়েটাবাসী জঙ্গি হামলা দেখেছে। কিন্তু তা ছিল বিক্ষিপ্ত। হামলার ক্ষয়ক্ষতি ছিল সীমিত। হামলার প্রকৃতি অনেকাংশেই ছিল জাতিগত।
গত শতকের ৮০-এর দশকে কোয়েটায় বিপুলসংখ্যক আফগান শরণার্থী আসে। এতে কোয়েটার জনবৈশিষ্ট্য ও জীবন বদলে যায়। সেখানে অনেক শরণার্থীশিবির গড়ে ওঠে। শরণার্থীশিবিরগুলো জঙ্গি সংগ্রহের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। জঙ্গিরা সেখানে ঘাঁটি গড়ে। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তালেবানরা কোয়েটায় আশ্রয় নেয়। তারা গোপন আস্তানা গড়ে তোলে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২০১৪ সালে ইসলামাবাদবিরোধী তালেবানের বিরুদ্ধে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপজাতি-অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানের ফলে পেশোয়ার, ইসলামাবাদ, লাহোরে জঙ্গিদের হামলা চালানোর সক্ষমতা কমে যায়। একই সঙ্গে এই ঘটনার পর জঙ্গিদের কৌশলেও আসে পরিবর্তন। তবে কোয়েটা ঘিরে আফগান তালেবানের অভয়ারণ্য এখনো অক্ষত আছে। তারা তাদের কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। বিবিসি অনলাইন অবলম্বনে
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.