আঠারো। কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পা। এই বয়সটাই যেন বাঁধভাঙার সময়। জীবনযাপনের সবখানেই তার ছাপ দেখা যায়। পোশাকের নিত্যনতুন স্টাইল বা ধারা তো নির্ভর করে তরুণদের পছন্দের ওপরই। ‘এখন তরুণেরা চলতি ধারার পোশাক পরতে ভালোবাসে। ইন্টারনেটের কারণে আঙুলের ডগায় পুরো পৃথিবী। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ার খবর তারা পাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে। তাই কোন ধরনের নকশা ও কেমন রং গোটা পৃথিবীতে চলছে, সে ধারণা তাদের আছে। তাই যেকোনো পোশাক তৈরির আগে তরুণদের কথা ভাবি আমরা।’ নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বললেন ফ্যাশন হাউস মেনজ ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হেলাল।
‘সালোয়ার-কামিজ, ওড়না তো আছেই; তার সঙ্গে জনপ্রিয়তায় টেক্কা দিচ্ছে পশ্চিমা পোশাকও। এমন পোশাক তরুণেরা পরতে চায় না, যেটাতে সে স্বাচ্ছন্দ্য না। স্টাইলের পাশাপাশি তারা আরামকে বেশি গুরুত্ব দেয়।’ জানালেন জেন্টল পার্কের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। আর তাই দেশি পোশাকের সঙ্গে ঘটছে বিদেশি পোশাকের মিশ্রণ। তরুণীরাই দেখাচ্ছেন কীভাবে একটা কামিজের সঙ্গে অনায়াসে পরা যায় লম্বা স্কার্ট। পুঁতির গয়নার সঙ্গে ধাতব গয়না মিশিয়ে সাজের সমীকরণ বদলে দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণীটি। ছেলেদের ক্ষেত্রে ন্যারো কাটের প্যান্ট, প্রিন্টের শার্ট বা উজ্জ্বল রঙের পোলো তো আছেই। তরুণদের কাছে বেশি ভালোবাসার পোশাকটি বোধ হয় টি-শার্ট। নরম কাপড়ে তৈরি নানা ধরনের ছবি বা স্লোগান দিয়ে করা টি-শার্ট ঘরে-বাইরে সবখানে পরছেন তাঁরা। জিনসের প্যান্টেও নানা ধরনের ওয়াশের কারণে এসেছে বৈচিত্র্য—যার বড় কারণ তরুণদের চাহিদা মেটানো। আলমারিটাও তেমন তাঁর ঘরের আলমারিটা কিসে ভরা থাকে? সদ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মেহরুবা মুনিয়া বলেন, ‘আমার আলমারিজুড়ে নানা ধরনের পোশাক। বেশি আছে টপ আর প্যান্ট। খাটো বা ফুল হাতার টপের সঙ্গে লেগিংস, জিনস, স্কার্ট, সিগারেট প্যান্ট সবই পরি। বাবা-মায়ের সঙ্গে বাইরে গেলে কামিজ বা গাউন পরি। সোনা ও হিরার গয়না আছে, তবে সেটা খুব কম ব্যবহার করি। আমার পছন্দ নানা ধরনের জাঙ্ক জুয়েলারি। হাতভর্তি মোটা বালা, অক্সিডাইজড গয়নায় সাজতে ভালো লাগে।’ তাঁর আলমারিতে আরও আছে নানা ধরনের জুতা। ব্যালেরিনা, পাম্প শু, পেনসিল হিল, কেডস—সাজ বুঝে বেছে নেন সেখান থেকে একটা। পোশাকের পাশাপাশি ছেলেরা বিশেষভাবে পছন্দ করেন জুতা, রোদচশমা ও ঘড়ি। অনেকেই রিস্টব্যান্ড পরেন। তাই আলমারি ঘাঁটলে নানা ধরনের লেখা দিয়ে নকশা করা রিস্টব্যান্ড মিলবে অনেকের কাছে।
চলতি ধারা
বাজার ঘুরে ও ডিজাইনারদের সঙ্গে কথা বলে পোশাকের চলতি ধারা নিয়ে যে ধারণা পাওয়া গেল সেখানে তরুণদের জন্য পাশ্চাত্য পোশাকই বেশি। ফ্যাশন হাউস ওটুর ডিজাইনার তানজিনা নূর খানম বলেন, ‘তরুণীদের পোশাকে আরামই প্রধান কথা। যে কারণে বেশি চাহিদা দেখা যাচ্ছে পোশাকের নানা ধরনের কাটে। খুব বেশি আঁটসাঁট না, খানিকটা ঢিলেঢালা পোশাকই তারা বেছে নিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের টপ, কুর্তা, সিঙ্গেল কামিজের চাহিদা দেখা যাচ্ছে। লম্বা শার্টের সঙ্গে পোশাকে চেইনের ব্যবহারও পছন্দে আছে।’ বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে, জার্সি টপ, হাই-লো টিউনিক টপ (সামনের দিকে খাটো আর পেছনে লম্বা), কাঁধখোলা টপ, ফতুয়া, স্কার্ট, শার্ট, জনপ্রিয় কোনো মুখের ছবিসহ টি-শার্ট, স্লোগানসহ টি-শার্ট, স্লিম ফিট শার্ট, গাউন, কেইপ, লম্বা-খাটো কটি ইত্যাদি পোশাক বেশি পরছেন তরুণেরা। আর এসব পোশাকে হালকা ও গাঢ় দুই ধরনের রংই দেখা যাচ্ছে। পোশাকের রং নির্বাচনে আন্তর্জাতিক ধারা মেনে দেশি ফ্যাশন হাউসে তৈরি হয় পোশাক। আর দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে বছরের একেক সময়ে একেক ধরনের রং বেশি চলছে।
বাঁধভাঙা বয়সের স্টাইলেও নতুনের কেতন উড়ছে। দেশি ফ্যাশন হাউস তাই এগিয়ে চলছে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। যেখানে পোশাকের ধারা তৈরি হচ্ছে আঠারোর হাত ধরেই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.