একাধারে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হোয়াইট হাউস ত্যাগের আর বেশি দেরি নেই—মাত্র দুই মাস। দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি নিজ ভূখণ্ডে তো বটেই, বিশ্ব ইতিহাসেও আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর নামোচ্চারণের অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হলো, তিনি বিশ্বের শক্তিধর একটি দেশের শাসনভার পরিচালনা করেছেন। সেই শাসনামলটা কেমন, সেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে তাঁর বিদায়ের আগেই।
১৯৯০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে চলছিল রক্ষণশীল আর উদারপন্থীদের মধ্যে তীব্র লড়াই। ওবামার পূর্বসূরি রিপাবলিকান রাজনীতিক জর্জ ডাব্লিউ বুশের আমলেও একই ধারা বজায় ছিল। উপরন্তু ছিল অভ্যন্তরীণ-বৈদেশিক সব বিষয়ে বুশের একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা। সেই বদ্ধ আবহাওয়ায় সুবাতাস প্রবাহের অঙ্গীকার করেন ওবামা। ক্ষমতায় বসে তিনি জনগণকে প্রত্যাশা আর পরিবর্তনের আগামীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কিন্তু টানা আট বছরের শাসনকালে আদতে কী ঘটেছে?
ওবামা শাসনের প্রথম বছরেই ৪০ লাখ আমেরিকান চাকরি হারিয়েছে, ইরাক ও আফগানিস্তানে যে যুদ্ধ আগে থেকে চলছিল সেই যুদ্ধে আরো মানুষ মরেছে। তাই বছর না পেরোতেই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন তাঁর রাজনৈতিক শত্রু রিপাবলিকান সিনেটর মিচ ম্যাককনেল। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়াটা হলো প্রেসিডেন্ট ওবামা যেন এক মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় না থাকেন।’
দেখা যাক, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার প্রথম বছরে দেশের কর্মসংস্থান ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির বিপরীতে তাঁর ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসে একই বিষয়ে বিশ্লেষকরা কী বলছেন। তাঁদের অভিমত, ওবামার শ্রমনীতি ও অর্থনীতির গতি ধীর, তবে ধারাবাহিক উন্নতির পথে রয়েছে। আর ইরাক-আফগানিস্তানে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে বটে, তবে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা উপস্থিতি ও তাদের রক্তপাত দুটোই কমেছে।
বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশের নেতা হয়েও ওবামা সেটার অপব্যবহার করেননি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় স্বার্থকে আরো সুনির্দিষ্ট করে ফেলার পাশাপাশি তিনি বহির্বিশ্বে অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণের পরও তিনি এসব বিষয়ে ছাড় দেননি। তাঁর এমন পররাষ্ট্রনীতির কারণেই সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেননি। যদিও ইসলামিক স্টেট দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বেই সেখানে দুই বছর ধরে সামরিক অভিযান চলছে।
ব্যক্তিগত জীবনে ওবামার বিরুদ্ধে নিস্পৃহ স্বভাব এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার অভিযোগ রয়েছে। তা সত্ত্বেও ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে তাঁর জনপ্রিয়তা সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও রোনাল্ড রিগ্যানের জনপ্রিয়তার মাত্রাকে ছুঁই ছুঁই করছে। ৫৫ শতাংশ আমেরিকানের বিশ্বাস, ওবামার আশাবাদী ও পরিবর্তনকামী কর্মপন্থা কাজে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, ধেয়ে আসা মহামন্দার আগে ওবামা-পরবর্তী রাজনীতি অর্থনৈতিক গ্যাঁড়াকলে পড়বে। অর্থনৈতিক
দ্বন্দ্বটা হবে বিশ্বায়নবাদী বনাম স্বদেশি, রক্ষণশীল বনাম উদারপন্থী।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.