গত দুই বছরে অন্য এক বাংলাদেশকে দেখছে ক্রিকেট বিশ্ব। আর বাংলাদেশ দলের এমন সাফল্যে বাহবা পান প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও। কোচ হাথুরুসিংহের অধীনে বিশ্ব ক্রিকেটে নৈপুণ্যের ডানা মেলেছেন তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজের মতো তরুণ খেলোয়াড়রা। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় শেষে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের বর্তমান ভাবনাটা কেমন? প্রশ্ন: বিশাল এক টেস্ট জয় শেষে কী ভাবছেন? হাথুরুসিংহে: আমার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। আর কেবল বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের প্রতিক্রিয়াটা দেখুন! এটা শুরু। এটা খুবই বড় এক প্রাপ্তি। প্রশ্ন: বাংলাদেশের মানুষের প্রতিক্রিয়াটা কেমন? হাথুরুসিংহে: আমি খেলোয়াড়, বোর্ড ও সমর্থকদের নিয়ে গর্বিত। টেস্ট মর্যাদা লাভের পর এর জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা ছিল তাদের। তাদের কাছে এর মানেটা কী তা আমি বুঝি। অংশ হতে পেরে আমিও গর্বিত। প্রশ্ন: ওয়ানডের সাফল্যকে টেস্ট ক্রিকেটেও ধরে রাখাটা সহজ নয় নিশ্চয়, বিশেষ করে যখন ১৪ মাস পর টেস্ট খেলতে যায় কোনো দল? হাথুরুসিংহে: চ্যালেঞ্জটা সামর্থ্য নিয়ে নয়। টেস্টে মানসিক প্রস্তুতিটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নিজের উপর বিশ্বাস ছিল যে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবো। নিজেদের পরিকল্পনার উপর বিশ্বাস ছিল। আমাদের চ্যালেঞ্জটা ছিল, হারের শঙ্কা যেন মাথায় না আসে। আর তেমন হলে আমরা ভালো কিছু পাবো বলে বিশ্বাস ছিল। প্রশ্ন: আপনার প্রথম সিরিজের (ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর) সঙ্গে এর ব্যতিক্রম কী? হাথুরুসিংহে: একদিন টেলিভিশনে ওই সফরের ম্যাচগুলোর পুনঃপ্রচার দেখছিলাম আমি। আর আমরা খেলাটির প্রতিটি বিভাগে কতটা বদলে গেছি দেখে বিস্মিত হলাম। দুভার্গ্যজনকভাবে ওই ম্যাচে শফিউলকে (ইসলাম) দেখলাম বল ছেড়ে দিল। আমি তার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে টানছি না। কিন্তু ভাব-ভঙ্গির পরিবর্তনটা পরিষ্কারই। এখন ছেলেরা কোনো দলকে ভয় পায় না। জয়ের জন্যই মাঠে নামে তারা। ওই ম্যাচগুলোর ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন তারা কতটা এগিয়েছে। প্রশ্ন: এমন বিশ্বাস এলো কিভাবে? হাথুরুসিংহে: বিশ্বাস আসে ফল দেখে। শুরুতে এটা কঠিন। তবে সাফল্য আরেকটা সাফল্য এনে দেয়। প্রশ্ন: এমন উইকেটে খেলার ভাবনা কখন এলো। পরিকল্পনাটা কার? হাথুরুসিংহে: এটা সম্মিলিত ভাবনা। খেলোয়াড়রাও তাদের আইডিয়া ও আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছিল। এ জন্য অনুশীলনের ধরনেও পরিবর্তন আনার দরকার হয়। শেষ পর্যন্ত চাপটা সামলাতে হয় খেলোয়াড়দেরই, আমাদের নয়। প্রশ্ন: ব্যাটিং ধস নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা আছে? হাথুরুসিংহে: আমার মনে হয়, এ নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। পিচের কারণে সিরিজটি চ্যালেঞ্জের ছিল সবার জন্যই। এটা একবার আপনার মাথায় এসে গেলে সব কঠিন হয়ে যায়। আপনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা কাজে দেয় না। প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাসকিন, মোস্তাফিজ, মিরাজদের সূচনা দেখে আপনি কী বলবেন? হাথুরুসিংহে: উপমহাদেশে এ চ্যালেঞ্জটা বড়। কারণ এখানে এটা একটা খেলার চেয়েও বেশি কিছু। তরুণ একজন খেলোয়াড়কে প্রত্যাশার বোঝাটা বইতে হয়। আর তারকা হয়ে ওঠা এ খেলোয়াড়ের আশপাশে ভালো মানুষের ভিড় থাকাটা জরুরি। যারা তাকে পা মাটিতে রাখার পরামর্শ দেবেন, উপদেশ দেবেন। আমি ম্যাচ শেষে মেহেদীর (মিরাজ) সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বলেছি, সাফল্যটা সতীর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে উদযাপন করতে। ও ভালো ছেলে। আমার কথা সে বুঝতে পেরেছে। প্রশ্ন: এখন ব্যাঙ্গালোর (ভারতের কাছে ১ রানে হার) ম্যাচের কথা ভোলা যায়? হাথুরুসিংহে: আপনি যদি ভুলে যেতে চান তাহলে আপনি যা অর্জন করতে চান তা অস্পষ্ট হয়ে যাবে আপনার কাছে। ওই ম্যাচের কথা একবারেই ভোলা যাবে না। ওই ম্যাচ থেকে খেলোয়াড়দের শিক্ষা নিতে হবে। ওটা ভুলে গেলে তাদের সামনে কী আছে তা দেখতে পাবে না তারা। উভয় টেস্টে এক ধরণের শট খেলে সাকিব-মাহমুদুল্লাহকে উইকেট খোয়াতে দেখে আপনার কী মনে হচ্ছে? হাথুরুসিংহে: তারা রক্তমাংসের মানুষ। তারা ভুল করতেই পারে। দ্রুত শিক্ষা নিলে তাদের ক্যারিয়ারের জন্যই ভালো।
প্রশ্ন: রাগ হলে হাথুরুসিংহে কী করেন? হাথুরুসিংহে: গত আড়াই বছরে আমি বোধহয় মাত্রই দুইবার কোনো বস্তুর গায়ে লাথি ঝেরেছি (হাসি)। আমি কৌতুক করলাম। প্রধান কোচ হিসেবে আমার রাগ হতেই পারে। খেলোয়াড় ও পরিকল্পনার মাঝখানে ফিল্টারের মতো কাজ করতে হয় আমাকে।
সুযোগ হারানোর ভয়ে ছিলেন হাথুরুসিংহে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনের চা বিরতির কথা। জয়ের নাগালে থেকে আরো একবার টাইগারদের শূন্যহাতে ফিরে যাওয়ার শঙ্কায় কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে ইংল্যান্ডকে ২৭৩ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। জবাবে ১০০/০ সংগ্রহ নিয়ে ম্যাচের তৃতীয় দিনের চা বিরতিতে যায় ইংল্যান্ড। তবে বিরতি থেকে ক্রিজে ফিরেই বল হাতে ইংলিশদের ভেলকি দেখান বাংলাদেশের স্পিন জুটি সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দিনের শেষ সেশনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডে ব্যাটিং লাইন। ৬৪ রানে দশ উইকেট তুলে নেন সাকিব-মিরাজ। এতে মিরাজের ৬ ও সাকিবের শিকার ৪ উইকেট। শেষ সেশনে টাইগারদের এমন নৈপুণ্যের নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ ছিল কি? জয়ের দিন হাতুরুসিংহে বিস্তারিত বলতে না চাইলেও পরে ক্রিকইনফোকে বলেন, আমি যেটা বলতে পারি বড় খেলোয়াড়রা নৈপুণ্য দেখালো। আমি খুবই হতাশ ছিলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আরো একবার নাগালে এসে সুযোগ নষ্ট করছি আমরা। আমি ছেলেদের সঙ্গে কথা বললাম। আমি দায়িত্ব নেয়ার চ্যালেঞ্জ দিলাম তাদের। আমি তাদের বললাম, এ সুযোগ আর আসবে না। আমি খুশি যে তারা পরে বিশেষ কিছু করে দেখালো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য সিরিজে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে খেই হারাতে দেখা যাচ্ছিল টাইগারদের। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের নাগালে থেকে শূন্য হাতে ফেরেন টাইগাররা। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টেও ম্যাচের পুরোটা জুড়ে ফেভারিট দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকেই। হাথুরুসিংহে বলেন, দলটি এখনও শিখছে। তাদের অনেক দূর যেতে হবে। আামাদের ঝুলিতে আরো সাফল্য থাকতে পারতো। এ জয়ে তাদের সামনে ভালো এক স্মৃতি রইলো। সম্ভাবনা তৈরি হওয়া ম্যাচগুলোতে জয় দেখার অভ্যাসটাও রপ্ত হবে তাদের। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। সফল এ কোচের অধীনে টেস্টে চার ম্যাচে জয় দেখলো বাংলাদেশ। তবে নিজের প্রশংসা শোনার চেয়ে নিজের কাজের দিকেই আগ্রহ তার। হাথুরুসিংহে বলেন, খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আমি অনেক সমর্থন পেয়ে থাকি। তাদের ভাবনাগুলো শোনার চেষ্টা করি। সবাই আপনাকে পছন্দ করার দরকার নেই। কিছু মানুষ আপনার কাজে সন্তুষ্ট হবেন, আর একদল সমালোচনা করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত ফলটাই আসল।
বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ গড় ব্যাটসম্যান ম্যাচ রান সর্বোচ্চ গড় তামিম ইকবাল ২ ২৩১ ১০৪ ৫৭.৭৫ ইমরুল কায়েস ২ ১৪৩ ৭৮ ৩৫.৭৫ সাব্বির রহমান ২ ৯৮ ৬৪* ৩২.৬৬ শুভাগত হোম ১ ৩১ ২৫* ৩১.০০ মাহমুদুল্লাহ ২ ১১৫ ৪৭ ২৮.৭৫ সাকিব আল হাসান ২ ১০৬ ৪১ ২৬.৫০ মুশফিকুর রহীম ২ ১০০ ৪৮ ২৫.০০ মুমিনুল হক ২ ৯৪ ৬৬ ২৩.৫০ তাইজুল ইসলাম ২ ২৯ ১৬ ১৪.৫০ কামরুল ইসলাম ২ ৭ ৭ ১.৭৫ মেহেদী হাসান ২ ৫ ২ ১.২৫ বোলার ওভার উই. সেরা গড় মেহেদী হাসান ১০৯.২ ১৯ ৬/৭৭ ১৫.৬৩ সাকিব আল হাসান ৮১.০ ১২ ৫/৮৫ ১৮.৪১ তাইজুল ইসলাম ৬৯.৫ ৭ ৩/৬৫ ২২.৮৫ কামরুল ইসলাম ১৯ ১ ১/২৪ ৮১.০০
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.