যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে আসছেন ক্ষমতায়, তা জানার আর খুব বেশি দেরি নেই। ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন আর রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে জল্পনা-কল্পনাও জমে উঠেছে। প্রধান দুই দলের এই দুই প্রার্থীর কেউ একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে তা বিশ্বের জন্য কেমন হবে, তা নিয়েই এখন আবর্তিত হচ্ছে আলোচনা। মার্কিন নির্বাচন বিশ্বের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে তা বিশেষজ্ঞ ও সাবেক নীতি-নির্ধারক কয়েকজনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন বৃটিশ স্কাই নিউজের কূটনৈতিক সম্পাদক ডমিনিক ওয়ার্ঘন। স্কাই নিউজ অবলম্বনে বিশেষজ্ঞদের সেসব মতামতই তুলে ধরা হলো এই লেখায়। ডমিনিক জানতে চেয়েছিলেন, এই নির্বাচনটি আমেরিকার বাইরের বিশ্বের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এর জবাব দিতে গিয়ে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রধান অর্থনীতিবিষয়ক ভাষ্যকার মার্টিন উলফ বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমার সারাজীবনে দেখা এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। বৈশ্বিক নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই প্রভাবশালী। বিশ্বে সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর থেকে বিশ্বকে সাজানোর কাজটিও তারাই করে আসছে। তাদের উন্মুক্ত নীতি, বাণিজ্য ব্যবস্থায় সমর্থন, নিরাপত্তা, অন্যান্য ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ও মিত্রতা- এসব বিষয়ে যদি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বদলে যায়, তবে গোটা বিশ্বেই এই পরিবর্তনের গভীর প্রভাব পড়বে। এমনকি এটা রোনাল্ড রিগ্যানের সময়ের চেয়েও অনেক বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠবে।’ ডমিনিক ওয়ার্ঘন দ্বিতীয় প্রশ্নটি করেছিলেন, এই নির্বাচনটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক একটি নির্বাচন। বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী বিশ্বের স্থিতিশীল ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং বিশ্বে আমেরিকার অবস্থানকে ধরে রাখতে এই নির্বাচন কি এরই মধ্যে স্থায়ী ক্ষতি সাধন করেছে? জবাবে মার্টিন উলফ বলেন, ‘আমার মনে হয় না যুক্তরাষ্ট্রে এমন ধরনের প্রার্থী আগে আমরা কখনও দেখেছি। প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকা সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর সত্যিই কখনও এমন প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়াননি। এবং আমার মনে হয়, আমেরিকার গণতন্ত্রের ভিত্তিতে এমন একটি রূপান্তরের সম্ভাব্য তাৎপর্য প্রসঙ্গে আমাদের শঙ্কিত হওয়াটা যথার্থ।’ ন্যাটোর সাবেক মহাসচিব আন্দ্রেস ফগ রাসমুসেনের কাছে ডমিনিক জানতে চান, ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কি বিশ্বের শঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে? রাসমুসেন বলেন, ‘আমরা জানি না ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালা সুনির্দিষ্টভাবে কী হবে। কিন্তু তার কাছ থেকে আমরা যে ধরনের বক্তব্য পেয়েছি তাতে তিনি বিশ্বের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারেন। ডনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করেছেন। রাশিয়ার অবৈধভাবে ক্রাইমিয়া দখলকে স্বীকৃতি দেয়ার ইঙ্গিতও তিনি প্রকারান্তরে দিয়েছেন। আমার মনে হয়, তার এ ধরনের বক্তব্য যদি নীতিতে পরিণত হয় তবে তা ন্যাটোকে দুর্বল করবে, অপরাধ দমনে শাস্তির হুমকিকে দুর্বল করবে এবং পুতিনকেও পশ্চিমাবিশ্বকে বিভক্ত করতে প্ররোচিত করবে।’ একই প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক বৃটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার ক্রিস্টোফার মেয়ার বলেন, ‘ট্রাম্পের মেজাজ, অল্পে উত্তেজিত হওয়া, ধর্মান্ধতা ও বিশ্ব সম্পর্কে অজ্ঞতা তাকে অযোগ্য করে তুলেছে। তিনি ওভাল অফিসের দায়িত্ব পেলে সবাই যে যার মতো চলতে থাকবে এবং আমরা অত্যন্ত বন্ধুর একটি ভূরাজনৈতিক পরিমণ্ডলের পথে ধাবিত হবো।’ স্যার মেয়ার আরো বলেন, ‘ন্যাটো চুক্তির পঞ্চম অনুচ্ছেদে বলা আছে, যদি ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশ আক্রান্ত হয়, তার সহায়তায় জোটের অন্য সব সদস্য দেশের এগিয়ে আসাটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ট্রাম্প এরই মধ্যে বলে রেখেছেন, ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশ যদি জোটটির বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ প্রদান না করে তবে এই অনুচ্ছেদটি স্থগিত করা হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থার কফিনে এটি সত্যিকার অর্থে শেষ পেরেক।’ ডমিনিক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপদেষ্টা অ্যারন ডেভিড মিলারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনিই হোন না কেন, তার কাছ থেকে বিশ্ব কী আশা করতে পারে? জবাবে মিলার বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটন কিংবা ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বা আমেরিকার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে হাজির হতে পারবেন, এমন ধারণা আমার কাছে বিভ্রম বৈ কিছু নয়। আমাদের সংবিধান আরো নিখুঁত একটি ঐক্যের কথা বলে। এতে কোথাও বলা নেই যে আমেরিকান নীতির লক্ষ্য একটি অধিক নিখুঁত বিশ্ব গড়ে তোলা। তার অর্থ এই নয় যে আমাদের বিশ্বকে বাদ দিয়ে ভাবতে হবে। সেটা আমরা পারব না। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে ইরাক ও আফগানিস্তানের ঘটনার পর আমাদের অত্যন্ত সতর্কতার ভাববে হবে আমেরিকানদের স্বার্থ কী সেটা নিয়ে। কীভাবে তাদের সবচেয়ে কার্যকর ও সুন্দরভাবে সুরক্ষা দেয়া যায়, সেই উপায়ও আমাদের সতর্ক হয়ে বের করতে হবে।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.