ক্যালেন্ডারের পাতায় কার্তিকের প্রায় মাঝামাঝি। হিমেল বার্তা দিয়ে হেমন্তের জানিয়ে দেয়ার কথা শীত আসছে। কিন্তু শীতের দেখা মিলছেই না। উল্টো ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে অস্বস্তি ছড়াচ্ছে। দিনে ঘরের বাইরে বের হলে উল্টো সূর্যের তেজে চোখ ও শরীরে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। রাতে এখনও মাথার ওপর ফ্যান না চললে দু চোখের পাতা এক করা যায় না। সিলেট নগরীতে এখনও শীতের দেখা না মিললেও বিভাগের অন্যান্য এলাকায় অবশ্য ইতিমধ্যেই শীতের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানবাহন, কল-কারখানা, আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন বৃদ্ধির পাশাপাশি গাছপালা কমে যাওয়ায় ‘শ্রীভূমি’র প্রতি শীতের এ বিরূপ আচরণ। সারা দেশের মধ্যে শীতল একটি এলাকা হিসেবে সিলেটের সব সময়ই আলাদা একটা পরিচয় আছে। পাহাড়-টিলায় ঘেরা উত্তর-পূর্বের এ জনপদে একটু আগেভাগেই শীতের হাওয়ার পরশ লাগে। তবে এবার যেন পাহাড় টিলা বেয়ে শীত নামতেই চাইছে না। শীত না এলেও শীতের অনেক সবজি কিন্তু বাজারে হাজির হয়ে গেছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম এমনকি শীতের ফল কমলা লেবুও হাজির। কিন্তু হাজির হচ্ছে না কেবল শীত। সিলেট নগরীতে সকাল কিংবা রাতের কোনো অংশেই শীত অনুভূত না হলেও বিভাগের অন্যান্য এলাকায় শেষ রাতের দিকে বা সকালে হিমেল হাওয়া পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, হাওর-জলাশয়ে ঘেরা সুনামগঞ্জে সকাল বেলায় অনেকেই গায়ে হালকা শীতের পোশাক জড়িয়ে ঘর থেকে বের হন। আবার শেষ রাতে শীতের হিমেল পরশে গায়ে কাঁথা নিতে হচ্ছে চায়ের দেশ মৌলভীবাজারে। হবিগঞ্জেও শেষ রাতের দিকে ঠাণ্ডা অনুভূত হয় বলে জানান অনেকেই। সিলেট নগরী ছাড়া সিলেট জেলার অন্যান্য অংশেও শেষ রাতে কুয়াশার দেখা মেলে, গায়ে শীতের পরশও টের পাওয়া যায়। শীতের বিলম্বিত আগমন প্রসঙ্গে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক মুয়্যিদ হাসান মানবজমিনকে বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এমনটি হচ্ছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী কেবলই উষ্ণতার দিকে যাচ্ছে। তিনি তথ্য দেন, বিজ্ঞানীদের হিসেবে ২০১৬ সাল পৃথিবীর নিকট ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। জলবায়ুর এ পরিবর্তনের ফলেই সময়মতো শীত আসছে না বলে তার মন্তব্য। সিলেট নগরীতে শীতের আগমনে বিলম্বের কারণ নগরায়ন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন ‘এটা আসলে পরিষ্কার করে বলা সম্ভব নয়। নগরায়নের প্রভাব তো আছেই। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনটাই মূল কারণ। সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, শুধু শীত নয় অনেক কিছুরই পরিবর্তন হচ্ছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতি তার চিরচেনা রূপটি হারিয়ে ফেলছে। এ কারণে সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতও বেড়েছে। তিনি তথ্য দেন, প্রাক মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের সময় যেখানে ২৬ ভাগ বৃষ্টিপাত হতো এবার সে সময় ৪২ ভাগ বৃষ্টি হয়েছে। এপ্রিল মাসে অন্যান্য বছর গড়ে ৩৭৮ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টিপাত হলেও এ বছর বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১ হাজার ৩০ মিলিমিটার। বজ্রপাতের সংখ্যাও বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন শুধু এপ্রিল মাসেই ১৭৮টি বজ্রপাত সংঘটিত হয়েছে সিলেটে। শীত যে দূরে সরে গেছে মানছেন এ আবহাওয়াবিদও। তিনি বললেন, অক্টোবর মাসে যেখানে গড় তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি থাকার কথা সেখানে এ বছর এ মাসে তাপমাত্রার গড় ৩৫.২ ডিগ্রি। তবে তিনি আশাপ্রকাশ করেন শিগগিরই সিলেটসহ সারা দেশেই শীতের দেখা মিলবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.