বাংলায় গান গেয়ে, বাংলায় স্বপ্ন দেখে, বাংলা ভাষাকে মাধ্যম করে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। এখন সবাই তাঁর মতো গাইতে পারবেন—‘আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি।’ গোটা দুনিয়ার মানুষের কাছে মুহূর্তে পৌঁছে যাওয়ার মাধ্যম ইন্টারনেট। ডট বাংলা ডোমেইন চালুর পর এখন থেকে ইন্টারনেট ওয়েব ঠিকানা লেখা যাবে বাংলায়। ৫ অক্টোবর ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ডট বাংলা ডোমেইন চালুর ঘোষণা দেন। ইন্টারনেটে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডোমেইন (আইডিএন) ডট বাংলা (.বাংলা) বরাদ্দ পায় সেদিন। ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস (আইক্যান) পরিচালনা পর্ষদের সভায় বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে এই ডোমেইন নেম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখন বাংলাদেশের জন্য আইক্যান স্বীকৃত ডোমেইন নেম হলো দুটি। একটি ডট বাংলা এবং অপরটি ডট বিডি (.bd)। দুটির মধ্যে ডট বাংলায় ওয়েব ঠিকানা লেখা যাবে বাংলা ভাষায়। যেমন ডট বাংলা ডোমেইন ব্যবহার করে ওয়েব ঠিকানা হিসেবে প্রথমআলো.বাংলা লেখা যাবে। যেভাবে বরাদ্দ পেল ডট বাংলা মিসরের দ্বীপশহর শারম আল শেখে ২০০৯ সালের ১৫ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলে জাতিসংঘের চতুর্থ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম সভা। বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের (বিআইজিএফ) উদ্যোগে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে এতে। এই দলের সদস্য ছিলেন বিআইজিএফের বর্তমান মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল হক। তিনি বলেন, ‘সে সময় ডোমেইন-সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন পড়ে আমার মনে প্রশ্ন আসে—বাংলা ভাষায় ডোমেইন নেম কেন হবে না? তারপরই তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে বিষয়টি জানাই।’ আবদুল হক আরও বলেন, তথ্যমন্ত্রী এরপর এ নিয়ে আলোচনা করেন আইক্যানের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রড বেকসট্রমের সঙ্গে। আলাপ শেষে যা জানালেন তা হলো, এ প্রস্তাব সরকারের মাধ্যমেই পাঠাতে হবে। সফর শেষে হাসানুল হক ইনু তৎকালীন সংসদীয় সভায় এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করা হয় এ ব্যাপারে। ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডট বাংলার জন্য আইক্যানে অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দেন। ২০১২ সালে এই ডোমেইনটি ব্যবহারের অনুমতি পেলেও কারিগরি জটিলতার কারণে তিন বছরের মধ্যেও সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি। আর তাতে ২০১৫ সালে এই ডোমেইনটি ব্যবহারের অনুমতি হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। পরে এই ডোমেইন উদ্ধারে উঠেপড়ে লাগে বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এরই মধ্যে এই ডোমেইনের জন্য আবেদন করে বসে ভারত ও সিয়েরা লিওন। সবশেষে ডট বাংলা চূড়ান্ত বরাদ্দ পায় বাংলাদেশ।
কী সুবিধা পাওয়া যাবে ইন্টারনেটে একটি রাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে এই ডোমেইন নেম। যেমন ডট ইউএস ডোমেইন নেমের কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকলে বোঝা যায় সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট। ডট বাংলা তেমনি ইউনিকোড দিয়ে স্বীকৃত বাংলাদেশি ডোমেইন। মোদ্দা কথা ইউআরএলে বাংলায় লিখতে পারবেন। নিজের ওয়েবসাইটের ঠিকানাটাও বাংলা ভাষায় হবে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এই ডোমেইনের নিয়ন্ত্রক। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কারিগরি উন্নয়নের সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটর। ১৮ অক্টোবর সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারানা হালিম বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস থেকে চালু হবে ডট বাংলা ডোমেইন। সেদিন থেকেই ডট বাংলা ডোমেইনে গ্রাহকদের নিবন্ধনও শুরু হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.