ছাত্রীদের জোরালো দাবি থাকলেও এখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক অনুষদ হিসেবে যাত্রা শুরু করতে পারছে না রাজধানীর সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ। আইনি জটিলতার কারণে চলতি বছর এ দাবি পূরণের কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা। তবে আইনি জটিলতা কাটিয়ে ভবিষ্যতে ঢাবির পৃথক অনুষদ হিসেবে এ কলেজের যাত্রা শুরু করানো যেতে পারে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ জন্য ছাত্রীদের অন্তত আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট ঘোষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু করার দাবিতে গত ৪ অক্টোবর রাজধানীর নীলক্ষেতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় মোমবাতি নিয়ে মিছিল করেন তারা। শিক্ষামন্ত্রী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালককেও সেদিন অবরুদ্ধ করেন তারা। কলেজটি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি পুরনো। দেশের অন্য সব সরকারি কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হলেও এ কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এটি আমেরিকার ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ওকলাহামা স্টেট ইউনিভার্সিটির সহায়তায় স্থাপিত হয়। প্রথমে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উপাদানকল্প কলেজ হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৬১ সাল থেকে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক এবং ১৯৬৩ সাল থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাশাপাশি স্নাতক সম্মান (গার্হস্থ্য অর্থনীতি) কোর্স চালু হয়। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে সমন্বিত গার্হস্থ্য অর্থনীতি থেকে ৫টি বিভাগে ৫টি সম্মান কোর্স চালু করা হয়। বিভাগগুলো হলো খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্টারপ্রেইনরশিপ, শিশুবিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক, শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা এবং বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প। ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান কোর্সে অনুরূপ ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মান কোর্স এবং ১ বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা হয়। অধিভুক্ত এ কলেজটিকে গত সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক অনুষদ হিসেবে চালু করার দাবি জানিয়ে আসছেন ছাত্রীরা।
এই দাবির পক্ষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ফারজানা আফরিন ফ্লোরা সমকালকে বলেন, তাদের কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হলেও অধিংকাশ সময় গার্হস্থ্য অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের পরিচয় সংকটে পড়তে হয়। যেহেতু সরকারি কলেজ, তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, নাকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে? এমন প্রশ্ন শুনতে হয়। শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্রেও লেখা থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। শিক্ষার্থীদের দাবি, শুধু আজিমপুরের সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ নয়, দেশের সব গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে একত্র করে একটি ইউনিট করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চাইলেই রাতারাতি এ কাজটি করা সম্ভব নয়। কারণ আইনগত কিছু বিষয় রয়েছে। সরকারি কলেজকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দিতে গেলে কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এতে সময় লাগবে। তারা জানান, এ কলেজটি বর্তমানে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ১০ দশমিক ৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে গেলে জমি ও অবকাঠামোসহ দিতে হবে। এতে জমির মূল্য পরিশোধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় সম্মত কি-না এমন কিছু জটিল প্রশ্নও সামনে আসছে। এছাড়া, এ কলেজে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় ৩০০ শিক্ষক কর্মরত। কলেজটি ঢাবির পৃথক অনুষদ হয়ে গেলে এই তিনশ’ শিক্ষকের পদ ঢাকা শহরে কমে যাবে। তাই শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সমকালকে বলেন, ‘বেসরকারি কলেজ যেগুলো আছে, সেগুলো তো আমাদের অধীনে আছে। সেগুলো আমাদের অধীনেই থাকবে। তবে সরকারি কলেজটি ইনস্টিটিউট করতে একটা দাবি সব সময় ছিল। সে দাবি পূরণের ব্যাপারটা সরকার ভেবে দেখতে পারে। সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা অনুসরণ করবে।’
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলো হচ্ছে- গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ (আজিমপুর), বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ (গ্রিন রোড), ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিক্স (লালমাটিয়া), ময়মনসিংহ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ (ময়মনসিংহ)। এর মধ্যে আজিমপুরের কলেজ ছাড়া বাকি তিনটি বেসরকারি।
সহশিক্ষার দাবিতে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা গত ২৪ সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তারা সহশিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সব শাখায় ভর্তি কার্যক্রম ও বেতন কাঠামো নির্ধারণেরও দাবি জানান।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.