ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।
সমস্যা
২০১০ সালের ঘটনা। আমি তখন স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়ি। এক মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেয়েটি তখন পড়ত উচ্চমাধ্যমিকে। এখন আমার বয়স ২৬। দীর্ঘ ছয় বছর ছয় মাস আমাদের সম্পর্ক ছিল। আমি তাকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতাম। সেও আমাকে খুব ভালোবাসত। দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করব। কিন্তু গত ১৪ আগস্ট ওর বিয়ে হয়ে যায়।
মেয়েটার স্বামী তৃতীয় শ্রেণির সরকারি চাকুরে। অথচ, বিয়ের আগ পর্যন্ত আমাকে বিয়ের বিষয়ে কিছুই জানায়নি। বিয়ের ঠিক এক সপ্তাহ আগে আমি অন্য আরেকজনের মাধ্যমে বিয়ের খবর পাই। তখন আমার স্নাতকোত্তর ব্যবহারিক পরীক্ষা চলছিল। আমি তাকে দেখা করার জন্য অনুরোধ করি। সে কলেজে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে বলেছিল, সে বাসায় গিয়ে বিয়ে ভেঙে দেবে। কিন্তু সেদিন বাসায় ফেরার পর থেকে ওর মোবাইল ফোন বন্ধ। তখন আমার একবার মনে হয়েছিল, আমাদের সব অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও হবু বরের কাছে পাঠিয়ে দিই। এগুলো পাঠালে বিয়ে নিশ্চিত ভেঙে যেত। কিন্তু বন্ধুদের পরামর্শে আমি কাজটি করিনি।
সম্প্রতি আমার স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে, আমি প্রথম শ্রেণি পেয়েছি। কিন্তু যখনই ওর সঙ্গে আমার স্মৃতিগুলো মনে হয়, আমি খুব কষ্টে ভুগি। আমার সঙ্গে কেন বিশ্বাসঘাতকতা করল—এই ভেবে আত্মহত্যাও করতে ইচ্ছে করে। আমি এখন কী করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, এমসি কলেজ, সিলেট।
পরামর্শ
তোমাদের সম্পর্কটি যেহেতু অনেক দিনের, সে কারণেই এত বেশি কষ্ট হচ্ছে। তোমরা দুজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলে এবং একটি স্বপ্নকে লালন করে সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলে। মেয়েটি যে তোমাকে ওর বিয়ের ব্যাপারে কিছুই জানায়নি, সেটি খুব অপ্রত্যাশিত। তোমরা নিজেদের পরিবারকে এই সম্পর্কের কথা জানিয়েছিলে কি না বা তাদের এ ব্যাপারে মতামত ছিল কি না, সে সম্পর্কে কিছু লেখোনি। এমনকি হতে পারে যে, মেয়েটির পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে তাকে কোনো মানসিক নির্যাতন করেছে? তাকে কি তারা প্রতিজ্ঞা করিয়েছিল যে, সে যেন বিষয়টি গোপন রাখে? যদি তা-ই হয়, তাহলে তো মেয়েটিও হয়তোবা বাধ্য হয়েছে অন্য একজনকে বিয়ে করতে। তুমি যে ওর ফোনটি বন্ধ পেয়েছ, সে ব্যাপারে পরিবার কোনো ভূমিকা রেখেছে কি না, তা তুমি ভেবে দেখতে পারো।
এতটা বিপর্যস্ত অবস্থায় ব্যবহারিক পরীক্ষা দেওয়ার পরও তুমি যে প্রথম শ্রেণি পেয়েছ, সে জন্য অভিনন্দন। এত ভালো ফল করেও সেটি সম্পূর্ণভাবে তুমি অনুভব করতে পারছ না, তা সত্যিই দুঃখজনক। এ ছাড়া তুমি যে ভিডিও এবং ছবিগুলো শেষ পর্যন্ত মেয়েটির স্বামীকে পাঠাওনি, সেটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। তবে বিয়ের আগে অন্তরঙ্গ ছবি তোলাটা সমীচীন নয়। এ ধরনের ছবিগুলো ব্যবহার করে নানা রকম সাইবার অপরাধ হয়ে থাকে। বিশেষ করে এর দ্বারা মেয়েদের অনেকভাবে হয়রানি করা হয়ে থাকে।
সবকিছু না জেনে যদি মেয়েটিকে বিশ্বাসঘাতক ভাবো, তাহলে হয়তো ওর প্রতি সুবিচার করা হবে না। ওকে সত্যিই খুব ভালোবেসেছিলে, কাজেই প্রত্যাশা করো সে যেন ভালো থাকে। সময়ের সঙ্গে আশা করি, তুমি এই দুঃসহ সময়টিকে মোকাবিলা করতে সমর্থ হবে। পরিবারের বা বাইরের বন্ধুরা যাদের ওপর ভরসা করতে পারো, তাদের কারও সঙ্গে কষ্টের কথাগুলো শেয়ার করো। সেই সঙ্গে নিজের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করো যে, তুমি কোনোভাবেই নিজের কোনো ক্ষতি করবে না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.