যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সে দেশে থাকা প্রায় ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে হয় দেশছাড়া করবেন, নতুবা জেলে ঢোকাবেন। সিবিএস টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণাজুড়েই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি জোর দিয়ে প্রচার করেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প। তবে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক বিশ্লেষক বলছিলেন, নির্বাচনী লড়াই উতরাতেই ট্রাম্প ওমন জোরালো পথ ধরেছিলেন। এখন বিজয়ী হওয়ার পর হয়তো অবস্থান নমনীয় করবেন। ভোটের এক দিন পর গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে বৈঠক এবং এরপর এক সাক্ষাৎকারে ওবামার স্বাস্থ্যনীতি আংশিক পরিবর্তন না করার ঘোষণা দেওয়ায় ট্রাম্পের নমনীয়তার ইঙ্গিতই মিলেছিল। কিন্তু এরপর আবার জানান দিলেন আগের সেই অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিবিএসের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের দেওয়া সাক্ষাৎকারটি যুক্তরাষ্ট্রের সময় গতকাল রোববার প্রচার হওয়ার কথা ছিল। তবে এর আগে সাক্ষাৎকারের চুম্বক কিছু অংশ প্রকাশ করা হয়। এতে অবৈধ অভিবাসীদের সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘সন্ত্রাসী, অপরাধের রেকর্ড আছে, দুষ্কৃতকারী দলের সদস্য ও মাদক বিক্রেতা—এমন প্রায় ২০ লাখ বা ৩০ লাখ মানুষকে আমরা দেশ থেকে বের করে দেব অথবা জেলে ঢোকাব।’
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের একটি বড় অংশ তাদের প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোর নাগরিক। তাদের প্রবেশ ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনিও এই বলেছিলেন যে, সেই দেয়াল তোলার খরচ মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায় করবেন। এ বিষয়ে সিবিএসের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, মেক্সিকো সীমান্তের কিছু অংশে দেয়ালের পরিবর্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি কি তা মানবেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘কিছু অংশে দেয়াল তোলাটাই হবে সঠিক পদক্ষেপ। আমি অন্তত তা-ই মনে করি। তবে নির্দিষ্ট কিছু অংশে বেড়াও দেওয়া যেতে পারে।’ পরাজয়ের কারণ কোমি—হিলারি: নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) পরিচালক জেমস কোমিকে দোষ দিয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। গত শনিবার নির্বাচনের তহবিলদাতাদের এক সম্মেলনে ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বলেন, ই-মেইল কেলেঙ্কারি নিয়ে কোমির নতুন তদন্তের ঘোষণা তাঁর জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নির্বাচনের মাত্র ১০ দিন আগে গত ২৮ অক্টোবর কোমি কংগ্রেসকে জানান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারির বিতর্কিত ই-মেইল নিয়ে নতুন তদন্ত শুরু হচ্ছে। নির্বাচনের আগে ৬ নভেম্বর কোমি দ্বিতীয় চিঠিতে জানান, এফবিআই তদন্তে হিলারির বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কিছু খুঁজে পায়নি। সম্মেলনসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সিএনএনকে জানায়, ই-মেইল নিয়ে নতুন তদন্তের ব্যাপারে জেমস কোমির ঘোষণা রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছে দেয়। সাবেক ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি তাঁর অর্থবিষয়ক কমিটিকে বলেন, ‘এ ধরনের নির্বাচন কেন সফল হলো না, তার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তবে আমাদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, জেমস কোমির চিঠি ভিত্তিহীন সন্দেহের জন্ম দিয়েছিল। আর এটি প্রমাণিত হয়েছে যে সেটিই আমাদের গতিকে থামিয়ে দেয়।’ গত শনিবার হিলারি তাঁর সমর্থকদের বলেন, তাঁর দল একটি লিখিত বক্তব্য তৈরি করেছে। তাতে দেখা গেছে, কোমির চিঠি নির্বাচনের জনমত জরিপ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, ই-মেইল সার্ভার পুনরায় নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্তটি জনসমক্ষে নিয়ে এসেছিলেন কোমি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা সৃষ্টি করে। হিলারি আরও বলেছেন, ই-মেইল তদন্ত নিয়ে এফবিআইয়ের চিঠিটি এমন সময় আসে, যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তিনটি বিতর্কে জিতে তিনি খুবই শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন। হিলারি বলেন, ‘তৃতীয় বিতর্কের পর আমরা বেশ ভালো বোধ করছিলাম। প্রচারাভিযানের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আমরা বেশ ভালো অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু দুটি রাজ্যে আমরা হাড্ডাহাড্ডি অবস্থানে ছিলাম। অ্যারিজোনা রাজ্যে আমরা সমানে সমান অবস্থানে ছিলাম।’
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.