একবারও মনে হলো না সাব্বির রহমান বেশি বেশি বলছেন। মনে হলো না তিনি অহংকারী। মনে হলো, এতটা অধিকার নিয়ে কথা বলা তাঁকেই মানায়। টি-টোয়েন্টি সাব্বির রহমানের খেলা নয় তো কার খেলা!
এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি, বিপিএলের ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ ইনিংস সাব্বিরের কালকের ১২২। দুর্ভাগ্য হলো, বরিশাল বুলসের ১৯২ রানের জবাবে তাঁর ৫৩ বলে সেঞ্চুরির ইনিংসটাও জেতাতে পারেনি রাজশাহী কিংসকে। মিরপুরে ম্যাচ শেষে সেঞ্চুরির আনন্দের চেয়ে তাই পরাজয়ের হতাশাই বেশি ছুঁয়ে গেল সাব্বিরকে, ‘আমার কাছে দলের জয়টাই বড়। আপনি যদি ১০০ করেও হেরে যান, তাহলে আর কোনো আনন্দ থাকে না।’ সাব্বিরের মনে জয়ের আনন্দ না-ই থাকতে পারে। কিন্তু তাতে তাঁর কীর্তির আলো তো কমছে না! মাত্র ৬১ বলে ১২২ রানের ইনিংস, ৯টি করে চার আর ছক্কা। চার-ছক্কার প্রায় সব শটই এত মনোমুগ্ধকর ছিল যে, আলাদা করে কোনোটার বর্ণনা দেওয়া অবান্তর। সাব্বির একেকটা ছক্কা মেরেছেন আর শূন্যে মুষ্টিবদ্ধ ঘুষি ছুড়ে যেন বলতে চেয়েছেন, ‘দেখো এটা কেবল আমিই পারি!’ আল আমিনের বলে ডেভিড মালানের ক্যাচ হওয়ার আগ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল তাঁর সামনে বরিশালের ১৯২ রান তুচ্ছ। রাজশাহীকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিতে চলেছে সাব্বিরের তলোয়ার হয়ে ওঠা ব্যাট। মাঠে ঠিক এই শঙ্কায় দুলছিল বরিশাল বুলসও। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে শাহরিয়ার নাফীস বললেন, ‘ও যেভাবে ব্যাট করছিল, ওভাবে খেললে কোনো স্কোরই বড় স্কোর থাকে না। ২২০-২৩০ রানও টপকে যাওয়া সম্ভব।’
দলকে ১৫৯ রানে রেখে সাব্বিরের ফিরে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত জিতেই মাঠ ছাড়তে পেরেছেন শাহরিয়ার-মুশফিকরা। রাজশাহী শিবিরে সাব্বির হয়ে থাকলেন ট্র্যাজেডির নায়ক। বিপিএল এর আগেও আটটি সেঞ্চুরি দেখেছে। ২০১৩ সালের আসরে তাতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে নাম লিখিয়েছেন শাহরিয়ার নাফীস ও মোহাম্মদ আশরাফুল। বাকিদের মধ্যে ক্রিস গেইল একাই করেছেন তিনটি সেঞ্চুরি। কিন্তু সাব্বির কাল যে ব্যাটিংটা দেখালেন, গেইল মাঠে থাকলে সেটা হয়তো বিস্ময় এঁকে দিত তাঁর চোখেও।
এবারের বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে খেলার কথা গেইলের। তাদের যেকোনো ম্যাচের আগেই শোনা যেতে পারে তাঁর আগমনী বার্তা। প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এই ব্যাটসম্যানকে টুর্নামেন্টের শেষ দিকে পাঁচ ম্যাচের জন্য আনার চিন্তা করেছিল চিটাগং। পরিস্থিতির প্রয়োজনে এখন নাকি তাঁকে নিয়ে আসা হতে পারে আরও আগেই।
সেটা ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে পরের ম্যাচে হলে লড়াইয়ের ভেতর আরেকটা লড়াইও দেখা যাবে—সাব্বির বনাম গেইল। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে গেইলের সেঞ্চুরি দুটি। ১৩ ফিফটির মধ্যেও দুবার আউট হয়েছেন নব্বইয়ের ঘরে। স্ট্রাইক রেট ১৪৫.৪৯। সেই গেইল ঢাকায় এসে যখন শুনবেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে নিজের ক্রিকেট বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশেরই একজন, একটু কি চমকে উঠবেন না!
কাল ম্যাচ শেষে সাব্বির করেছেন সেই দাবি, ‘টি-টোয়েন্টি সব সময় আমারই ম্যাচ। আমারই খেলা। টি-টোয়েন্টি খেলেই আমি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। ওখান থেকে টেস্টও খেলেছি। সব সময় বিশ্বাস করি, ক্রিকেটের এই ফরম্যাটটা আমার।’ ছক্কাবৃষ্টিতে কাল সেটাই সম্ভব করলেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে রানরেট হিসাব করে খেলতে বারবার স্কোরবোর্ডের দিকে তাকানো সাব্বিরের স্বভাব। এতগুলো ছক্কা সেই অভ্যাসেরই ফল, ‘টি-টোয়েন্টিতে যখন রান তাড়া করি, আমি বারবার স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাই। রানরেট হিসাব করে ঠিক করি কখন সেটাকে ৫-৬-এ নিয়ে আসব।’
১৯২ রানের জবাবে বলতে গেলে একাই লড়াই করে গেছেন সাব্বির। নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখাটাও তাই জরুরি ছিল। প্রতিটি ছক্কার পর সাব্বিরের বিশেষ উদ্যাপন সে কারণেই, ‘এটা আমার শক্তি। এসব করলে আমি ইতিবাচক থাকি, মনোযোগ ঠিক রাখতে পারি, উজ্জীবিতও থাকি।’
নিজের খেলাটাকে সাব্বির নিজের মতো সাজাবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক।
১২২
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সর্বোচ্চ ইনিংস। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ক্রিস গেইলের ১১৬।
৫৩ বল
স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। দ্রুততম সেঞ্চুরিটি তামিম ইকবালের (৫২ বল)।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.