‘দলের জয়ের জন্য ১ রান দরকার। সেটি করলাম তাতে ভীষণ আনন্দ। অন্য রকম অনুভূতি। কিন্তু ১২২ রান করলাম কিন্তু দল হারলো, তখন আর কোনো আনন্দ থাকে না। আমি আসলে সব সময় জয়ের জন্য খেলি। এর বাইরে কখনো নিজের জন্য চিন্তা থাকে না।’- ম্যাচ শেষে সাব্বির রহমান রুম্মান তার বক্তব্যে বুঝিয়ে দিলেন তার প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির উচ্ছ্বাস মিলিয়ে গেছে দলের পরাজয়ে। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ৬১ বলে ১২২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন রাজশাহী কিংসের সাব্বির। বিপিএলে এটাই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। ২০১২ সালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে বরিশাল বার্নার্সের গেইলের ১১৬ ছিল আগের সর্বোচ্চ।
৫৩ বলে আসে সাব্বিরের সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের কারো টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম তিন অঙ্ক ছোঁয়ার রেকর্ড। ২০১৩ সালে খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের বিপক্ষে ৫৬ বলে ১০০ করেছিলেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের আশরাফুল। সাব্বিরের ঝড়ো ইনিংসটি গড়া ৯টি করে ছক্কা-চারে। হায়দারের বলে শেষ ছক্কাটিতে শামসুর রহমানকে পেছনে ফেলেন তিনি। ২০১৩ সালে সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে অপরাজিত ৯৮ রান করার পথে ৮টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন শামসুর। বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের টি-টোয়েন্টিতে সেটাই ছিল সর্বোচ্চ ছক্কা। নিজের ছক্কার মার গুলোও দলের জন্যই বলে জানালেন সাব্বির। তিনি বলেন, ‘আসলে আমি নিজের রান নয়, দলের রান রেটের দিকে তাকাই। আমার মাথায় চিন্তা থাকে রান রেট ৬ থেকে কিভাবে ছয় বা সাতে নেয়া যায়।’
সাব্বির বেশি পরিচিত টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান হিসেবে। সেই ফরমেটে ৮৬তম ম্যাচে এসে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। ২০১০ থেকে টি-টোয়েন্টি খেলা সাব্বির ফিরতে পারতেন ১৪ রানেই। আল আমিন হোসেন সহজ ক্যাচ ফেলে দেয়ার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। ৫০ করতে খেলেছেন ২৬ বল। সাব্বির বলেন, ‘আমি সব সময় বিশ্বাস করি টি-২০ আমারই ফরমেট, এটি আমারই খেলা। আমি কিন্তু জাতীয় দলে টি-টোয়েন্টি দিয়ে শুরু করে টেস্ট খেলেছি। মাঠে নামলেই মনে হয় এটি আমারই খেলা আমারই আসর।’
সাব্বির যখন সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বসা তখন কথা বলছিলেন বরিশাল বুলসের ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস। সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে নাফীস সাব্বিরকে দেখে উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরে অভিবাদন জানালেন। এরপর সাব্বির সম্পর্কে বলেন, ‘এটি আমার দেখা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টি-টোয়েন্টি সেরা ইনিংস। আমাদের যে বড় বাউন্ডারি তা সাধারণত অস্ট্রেলিয়াতেই হয়। কিন্তু ও যেভাবে ছয়, চার মারছিল আমাদের মনে হচ্ছিল এখানে ২২০/২৩০ও নিরাপদ নয় আর আমরা তো করেছিলাম মাত্র ১৯১। একটু ভয় ছিল ওর ব্যাটিং দেখে। তবে বিশ্বাস ছিল টি-টোয়েন্টি লড়াইটা শেষ বল পর্যন্ত। তাই হয়েছে। আর সাব্বিকে বলবো ও এখন এদেশের অনেক বড় সম্পদ।’
এর আগে রাজশাহী প্রথম ম্যাচে হেরেছিল শেষ ওভারে। এ ম্যাচেই হারলো শেষ ওভারে। এই বিষয়ে সাব্বির বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে শেষ ওভারে আমরা হারি। সেই ম্যাচটি যেমন আমাদের জেতা উচিত ছিল। তেমনি এই ম্যাচেও। কিন্তু চার/ছয় মারতে গিয়ে আমরা হেরে যাই। এই সমস্যা নিয়ে দলের সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। মাত্র ৪ রান আমরা করতে পারিনি, এই ভাবে হারা উচিত নয়।’
বিপিএলের সেঞ্চুরি
ক্রিকেটার রান বল ৪/৬ প্রতিপক্ষ ভেন্যু মওসুম
ক্রিস গেইল/বরিশাল বার্নাস ১০১* ৪৪ ৭/১০ সিলেট রয়েলস ঢাকা ২০১২
ক্রিস গেইল/বরিশাল বার্নাস ১১৬ ৬১ ৬/১১ ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স ঢাকা ২০১২
ড্যারেন স্মিথ/খুলনা ১০৩* ৭৩ ৬/৬ সিলেট রয়েলস ঢাকা ২০১২
আহমেদ শেহজাদ/বরিশাল ১১৩* ৫৮ ১২/৬ রাজশাহী ঢাকা ২০১২
শাহরিয়ার নাফীস/খুলনা ১০৩* ৬৯ ১২/২ রাজশাহী খুলনা ২০১৩
মোহাম্মদ আশারাফুল/ঢাকা ১০৩* ৫৮ ১৪/২ সিলেট রয়েলস ঢাকা ২০১৩
ক্রিস গেইল/ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স ১১৪ ৫১ ৫/১২ সিলেট রয়েলস ঢাকা ২০১৩
এভিন লুইস/বরিশাল বুলস ১০১* ৬৫ ৭/৬ ঢাকা ডায়নামাইটস চিটাগাং ২০১৫
সাব্বির রহমান/ রাজশাহী ১২২ ৬১ ৯/৯ বরিশাল বুলস ঢাকা ২০১৬