নিজের দীর্ঘ ও সফল ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সোয়া চারশরও বেশি গান গেয়েছেন খুরশিদ আলম। এসবের মধ্য থেকে চলচ্চিত্রের অনেক গানই এখনও মানুষের মুখে মুখে। কালজয়ী এসব গানের মাধ্যমে খুরশিদ আলমও শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী একটি আসন গড়েছেন বহু আগেই। চলচ্চিত্রের গানের ক্ষেত্রে এ শিল্পীর অবদান অনেক। ‘মাগো মা’, ‘মিসলংকা’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘ওই প্রেমের দরজা খুলো না’, ‘নাচ আমার ময়না’, ‘তোমার নামে শপথ নিলাম’, ‘শোনো ভাইয়েরা কথা শোনো’, ‘ওই আমি বাঘ শিকার যামু’, ‘ও সাগর কন্যারে’, ‘পাখীর বাসার মতো চোখ দুটি তোমার’, ‘ও দুটি নয়নে স্বপনও চয়নে’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’, ‘নাচ আমার ময়না’, ‘ধীরে ধীরে চল ঘোড়া’, ‘মুন্না আমার লক্ষী সোনা আমার নয়নমনি’, ‘লেখাপড়া জানতাম যদি’, ‘এ আকাশকে সাক্ষী রেখে’ সহ তার গাওয়া অনেক গানই কালজয়ী রূপ পেয়েছে। এতটা পথ পাড়ি দেয়ার পরও এতটুকু ক্লান্ত নন খুরশিদ আলম। ক্লান্তিহীনভাবেই নিজের মতো করে প্রতিদিন গানের মধ্যে দিয়ে কাটছে তার সময়। নতুন গান কম গাইলেও স্টেজে মাঝেমধ্যেই দেখা মেলে এ কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীর। তবে সংখ্যার দিক দিয়ে অনেক কম অনুষ্ঠানেই গাইছেন তিনি। সব মিলিয়ে কেমন আছেন খুরশিদ আলম-জানতে চাইলে বলেন. খুব ভালো আছি। সব কিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। পরিবার ও গান এই দুই নিয়েই এখন আমার সময় কাটে। আগের মতো ব্যস্ত থাকছি না। তবে বাড়িতে থাকলেও গানের খোঁজখবর রাখার চেষ্টাটা থাকে। এতটা পথ সফলতার সঙ্গে পাড়ি দিয়েছেন। এ বয়সেও আপনি তারুণ্যের গতিতেই কাজ করছেন। তরুণ প্রজন্মের অনেকেরই আদর্শ আপনি। এর রহস্য কি? খুরশিদ আলম বলেন. আসলে রহস্যের কিছু নেই এখানে। সব হচ্ছে পেশার প্রতি ভালোবাসা। যেমন গান হলো আমার পেশা। গানটাকে মন থেকে ভালোবাসতে হবে। তাহলেই এগিয়ে যাওয়া যাবে। চেষ্টা করতে হবে। হার মানলে হবে না। মেধা, যোগ্যতা, পরিশ্রম ও চেষ্টা থাকলে সব হয়। এই নীতিতে আমি বিশ্বাস করি। আর কিছু নয়। এখন নতুন গান কি করা হচ্ছে? চিরসবুজ খুরশিদ আলম বলেন, নতুন গান করছি তবে তার সংখ্যা খুবই কম। চলতি বছর চলচ্চিত্রে একটি গান করেছি। কিছু গান গাওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। তবে সব ধরনের গান করতে চাই না। মন পছন্দ হলেই কেবল করি। অবশ্য কম করলেও আমি সব সময় গানের সঙ্গে থাকতেই পছন্দ করি। শিল্পীদের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করি। ভালো কোন প্রোগ্রাম হলে সেটায় অংশ নেই। এর বাইরে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করছি। অনেক সময় স্টেজে বা টিভি প্রোগামে এ প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে গান করি। তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে গান করতে খুব ভালো লাগে। তরুণ বয়সের নিজেকে তাদের ভেতর খোঁজার চেষ্টা করি। নতুন অ্যালবাম করার পরিকল্পনা আছে কি? খুরশিদ আলম বলেন, আপাতত সিডি প্রকাশের ইচ্ছে নেই। কারণ সিডির চল কমে গেছে। সিডির দোকানও তেমন চোখে পড়ে না। অ্যালবামের পরিবর্তে ডিজিটালি গান শুনছে মানুষ। এটা ভালো। কারণ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। তবে ফ্রি ডাউনলোডের ফলে শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এ বিষয়টির দিকে নজর দেয়া উচিত। নিয়ম-নীতির মধ্যে আসা উচিত বিষয়টি। এই সময়ের শিল্পীদের গান কি শোনা হয় আপনার? খুরশিদ আলম বলেন, অবশ্যই শোনা হয়। এখন ভালো ও খারাপ দু রকমের গানই হচ্ছে। তবে ভালোর সংখ্যাটা কম। একটি গানের মূল ভিত্তি হচ্ছে কথা ও সুর। এখন ভালো মানের কথা ও সুর তেমন হচ্ছে না। যার কারণে গান দীর্ঘদিন টিকে থাকছে না। এ জায়গাটায় সচেতন হওয়া উচিত। শুধু বানিজ্যিক উদ্দেশ্যের জন্য গান করা ঠিক নয়। আর গানের মানের দিকে আরও গুরুত্ব দেয়া উচিত। আপনার পরামর্শ কি থাকবে তরুনদের প্রতি? খুরশিদ আলম বলেন, আসলে এখন সবাই খুব ব্যস্ত। গানের ক্ষেত্রে বেশি সময় দিতে চায় না কেউ। আমাদের সময় একটা গান রেকর্ডিংয়ের সময় গীতিকার, সুরকার ও মিউজিশিয়ানসহ সংশ্লিষ্ট সবাই থাকতো। একটি গানের রিহার্সেল হতো, এরপর হতো দীর্ঘ সময় নিয়ে রেকর্ডিং। এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। এর ফলে তেমন একটা সময় লাগে না রেকর্ডিংয়ে। এখনতো আরও বেশি সময় দেয়ার কথা গানে। বিষয়টি নিয়ে এ প্রজন্মের শিল্পী ও সংগীত পরিচালকদের ভাবা উচিত।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.